দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থগিত ৩৯২ কেন্দ্রের ভোট বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হবে। এ লক্ষে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আটটি আসন হচ্ছে- যশোর-৫, লক্ষীপুর-১, দিনাজপুর-৪, কুড়িগ্রাম-৪, গাইবান্ধা-১, ৩ ও ৪ এবং বগুড়া-৭। বৃহস্পতিবার এসব এলাকায় সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে।

নির্বাচনের কারণে এসব এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৭ জানুয়ারির পরিবর্তে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। পাশপাশি নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, ভোটারের দিন পুলিশ ফোর্স বাড়ানোর পাশাপাশি নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচনী এলাকায় থাকার সময় বৃদ্ধি করেছে কমিশন। ৮টি আসনের মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ যশোর ও লক্ষীপুরের দুটি আসন। এসব আসনে প্রতিটি কেন্দ্রে ২০ জন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলোর এই নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ। ব্যাটালিয়ান আনসার সহযোগী ফোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে মোবাইল টিমের দায়িত্বে থাকবে।

ছয়টি জেলার ৮ সংসদীয় আসনে মোট ৯৫৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত ৩৯২ কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। স্থগিত কেন্দ্রগুলোর ভোটার সংখ্যা ১০ লাখ ১০ হাজার ১২৮ জন। ভোটেরদিন ১৩২ কেন্দ্রে ৪৩টি মোবাইল টিম থাকবে। প্রতি ৫টি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১টি করে মোট র‌্যাবের ৮২টি ও প্রতি ৫টি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১টি করে মোট বিজিবির ৮২টি মোবাইল টিম কাজ করবে। এছাড়া প্রতি ১০ কেন্দ্রের স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৪৩ জন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে ৩০ জন। ৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে যশোর-৫ ও লক্ষীপুর-১ এ দুটি সংসদীয় আসনে প্রতিটি কেন্দ্রে ১৬ জনের বদলে ২০ জন করে পুলিশ সদস্য ভোটের দিন মোতায়েন থাকবে।

স্থগিত ৩৯২ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ছয় জেলার আট আসনে মঙ্গলবার থেকেই পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ান আনসার, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বরয়ে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে।

এসব এলাকায় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনুষ্ঠিত গত ১২ জানুয়ারির বৈঠকে নিরীহ মানুষের প্রাণরক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনে গুলি চালাতে বলেছেন সিইসি।

ইতিমধ্যে, দিনাজপুর-৪ আসনে স্থগিত ৫৭ কেন্দ্রে ১৯টি, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে স্থগিত ২ কেন্দ্রে ১টি, গাইবান্ধা-১ আসনে স্থগিত ৫৪ কেন্দ্রে ১৮টি, গাইবান্ধা-৩ আসনে স্থগিত ৮০ কেন্দ্রে ২৭টি, গাইবান্ধা-৪ আসনে স্থগিত ৭২ কেন্দ্রে ২৪টি, বগুড়া-৭ আসনে স্থগিত ৪৬ কেন্দ্রে ১৬টি, যশোর-৫ আসনে স্থগিত ৬০ কেন্দ্রে ২০টি ও লক্ষীপুর-আসনে স্থগিত ২১ কেন্দ্রে ৭টিসহ মোট ১৩২টি মোবাইল টিম তাদের কাজ শুরু করেছে। প্রতিটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ৩টি কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়েজিত থাকবে।

তাছাড়া ভোটের দিন ১৩২ কেন্দ্রে ৪৩টি পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স হিসাবে থাকবে। প্রতি ৫টি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১টি করে মোট ৮২টি র‌্যাবের ও বিজিবি প্রতি ৫ কেন্দ্রে ৮২টি মোবাইল টিমা কাজ করবে।

প্রচার-প্রচারণা বন্ধ

মিছিল-মিটিং-সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণাও মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে। এ সময় নির্বাচনী এলাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রাও নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সব ধরনের মিছিল-মিটিং এর ওপরেও নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

যানচলাচল বন্ধ

বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২ পর্যন্ত ৬ জেলায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। মটরসাইকেল চলাচল ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

বিশেষ মনিটরিং সেল

নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে বিশেষ মনিটরিং সেল। প্রাপ্ত পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনকে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি এলাকায় ভিজিল্যান্সটিম ও অবজারভেশন টিম কাজ করছে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় সকল ধরনের বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সশস্ত্রবাহিনী ও র‌্যাব হেলিকপ্টার ব্যবহার করবে

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবে র‌্যাব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইসি সচিবালয় ও বাহিনীগুলোর অনুরোধে বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার পরিবহনে সহায়তা দেবে। স্ব স্ব বাহিনীর সদরের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগী/হতাহতদের জরুরি চিকিৎসা, স্থানান্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার সুবিধাজনক স্থানে মোতায়েন করবে বিমানবাহিনী। সেনাসদরের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনাসদস্য রিজার্ভ হিসেবে মোতায়েন থাকবে।

ফল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ ও পরিবেশন করা হবে। পাশপাশি কমিশন সচিবালয়ে ফলাফল সংগ্রহের জন্য ৬টি তথ্য সংগ্রহ সেল থাকবে।

তিন স্তরের নিরাপত্তায় ১৫ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে ইসি। নির্বাচনী মাঠে থাকছে প্রায় ১৫ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। নির্বাচন পরিচালনা কর্মকর্তার বাইরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি, আনসার ব্যাটালিয়ান ও এপিবিএন সদস্যরা মাঠে সার্বক্ষণিক টহলে থাকছে। একই সঙ্গে গ্রাম্য পুলিশ, চৌকিদার ও দফাদার নিয়োজিত থাকবে। পাশপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএস/জেএম/জানুয়ারি ১৫, ২০১৪)