দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে সাত আসনে ৩৯০টি কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার পুনঃভোট হচ্ছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপি, তরিকত ফেডারেশন ও স্বতন্ত্রসহ ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তবে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের দুই কেন্দ্রে আদালতের নির্দেশের কারণে ভোট হচ্ছে না।

এদিকে ৬ জেলার ৭ আসনের স্থগিত কেন্দ্রগুলোর পুনঃভোটের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ সব কেন্দ্রে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ভোটগ্রহণ করা হবে।

৫ জানুয়ারি বিএনপিসহ ১৮ দলের ভোট প্রতিহতের ঘোষণার মধ্যে হামলা ও নাশকতায় এ সব জেলার ৩৯২ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে ইসি।

বুধবার নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সেনা, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা প্রতিটি উপজেলায় ৫/১০টি কেন্দ্র ঘিরে টহলে থাকবে। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটদানের পরিবেশ তৈরিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

৫ জানুয়ারি সহিংসতা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের কারণে দিনাজপুর-৪, কুড়িগ্রাম-৪, বগুড়া-৭, গাইবান্ধা ১, ৩, ৪, যশোর-৫ ও লক্ষ্মীপুর-১ আসনের ৯৫৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯২ কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়।

পুনঃভোটের তথ্য :

দিনাজপুর-৪ আসনের ১২০টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত হয় ৫৭টি। স্থগিত কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯১৯। বাকি কেন্দ্রগুলোয় আওয়ামী লীগের আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৬৮ হাজার ৮৮টি, ওয়ার্কার্স পার্টির এনামুল হক সরকার ১ হাজার ৩৮০ ভোট পান।

গাইবান্ধার তিন আসনে পুনঃভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনজুরুল ইসলাম লিটন ইতোমধ্যে ৬৮ হাজার ৯৯৩ ভোট ও জাতীয় পার্টির আব্দুল কাদের খান ৮ হাজার ৩৮৬ ভোট নিয়ে লড়বেন গাইবান্ধা-১ আসনে। এখানকার ১০৯টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত ৫৪ কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০৯টি। গাইবান্ধা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের ইউনুস আলী সরকার ৭০ হাজার ৬৬৪ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম খাদেমুল খুদি ১২ হাজার ৭৮১ ভোট পেয়েছেন ৫০টি কেন্দ্রে। স্থগিত ৮০টি কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৬২৭টি। গাইবান্ধা-৪ আসনের ১৩০টি কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত রয়েছে ৭২টি। এতে ভোট রয়েছে ২ লাখ ৭৭টি। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ৫৯ হাজার ৮৬২ ও আওয়ামী লীগের মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ১৮ হাজার ৮০৬ ভোট নিয়ে লড়বেন। জাতীয় পার্টির মুহম্মদ আলতাফ আলী ৭ হাজার ৪৩ ভোট ও জেপির এটিএম আমিনুল ইসলাম ৩ হাজার ১৭৫ ভোট নিয়ে লড়বেন বগুড়া-৭ আসনে। এ আসনের ১৬১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৬টি কেন্দ্রে পুনঃভোট হচ্ছে। এতে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৬৫ ভোট রয়েছে।

যশোর-৫ আসনের ১২২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬০টি কেন্দ্রে পুনঃভোট হচ্ছে। এরমধ্যে ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৬ ভোট রয়েছে। আওয়ামী লীগের খান টিপু সুলতান ৩০ হাজার ৫৩১ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্টচার্য ১৮ হাজার ৩৩১ ভোট পেয়েছেন ইতোমধ্যে। তরিকত ফেডারেশনের এম এ আউয়াল নৌকা প্রতীক নিয়ে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে লড়বেন। ইতোমধ্যে তিনি ৩২ হাজার ৫৭ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ২০ হাজার ৯১১ ভোট। এ আসনের ৮১টি আসনের মধ্যে পুনঃভোটের ২১টি কেন্দ্রে ৫০ হাজার ২৭৯ ভোট রয়েছে।

আদালতের স্থগিতাদেশ

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ২টি কেন্দ্রের বৃহস্পতিবার ভোট স্থগিতাদেশ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা ইসিতে এসেছে। এক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার ওই দুই কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে না বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান। আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ আসনের আরো কিছু কেন্দ্রে পুনঃভোট চায়। পরবর্তী নির্দেশনা পেলে ওই কেন্দ্রে ভোট হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের ১০৬ কেন্দ্রের মধ্যে স্থগিত ২ কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ৭ হাজার ২৫৭টি। জেপির রুহুল আমিন ৩০ হাজার ৫৪৪ ভোট ও আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন ২৩ হাজার ৯৪৬ ভোট পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মধ্যে ৬ হাজার ৫৯৮ ভোটের পার্থক্য ঘোচাতে ভোট হচ্ছে ২ কেন্দ্রে।

আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর জবাব পেয়েছে ইসি :

যশোর-১ ও যশোর-২ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আফিল উদ্দিন ও মনিরুল ইসলামের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব পেয়েছে ইসি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আওয়ামী লীগের এ দুইজনের প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, দুইজনের লিখিত জবাব বুধবার আমাদের কাছে এসেছে। এখন তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। প্রয়োজন হলে তাদের শুনানিও করবো।

৫ জানুয়ারি ভোটে ২৯০টি আসনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে ইসি। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৯, জাতীয় পার্টি ৩৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, জেপি ১, তরিকত ১, বিএনএফ ১ ও স্বতন্ত্র ১৪টি আসন পায়।

উপজেলায় সেনা টহল :

৮টি সংসদীয় আসনের ৩৯২টি ভোটকেন্দ্রে পুনঃভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত স্ট্রাইকিং ফোর্স ১০টি ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবে। প্রতি পাঁচটি ভোটকেন্দ্রের জন্য একটি র‌্যাবের টিম ও প্রতিটি ১০টি ভোটকেন্দ্রের জন্য একটি বিজিবি টিম দায়িত্ব পালন করবে।

সেনাবাহিনী নির্বাচনি এলাকার উপজেলাসমূহে অবস্থান করবে ও জেলা সদরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করে রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবে।

এক ভোটকেন্দ্রে ২০ অস্ত্রধারী পুলিশ :

৫ জানুয়ারি নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১ থেকে তিনজন অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু ১৬ তারিখের নির্বাচনে ২০ জন অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া লাঠিহাতে ১০ জন আনসারও ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাহী হাকিম নিয়োগ :

পুনঃভোটগ্রহণের জন্য ৩০ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮টি নির্বাচনি এলাকায় ৮ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন, আনসার, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএস/এসবি/ এমডি/জানুয়ারি ১৫, ২০১৪)