ডেসটিনির ৫১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : গ্রাহকদের চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ এক হাজার ১৮২ টাকা আত্মসাৎ এবং তা পাচারের অভিযোগে ডেসটিনির ৫১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে ডেসটিনির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ওই দুটি মামলার চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাংবাদিকদের বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লি. (ডিটিপিএল) ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. এর অনুসন্ধান কাজ শুরু করি। প্রায় এক বছরের অধিক সময় তদন্ত করে কমিশনের তদন্ত টিম প্রায় তেরশ পাতার প্রতিবেদন কমিশনে পেশ করে। কমিশন তা পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবার নিয়মিত সভায় বিষয়টি অনুমোদন করে। পরবর্তী সময়ে এ চার্জশিট থানায় প্রেরণ করা হবে।’
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশনের আওতায় ছয় কোটির অধিক গাছ (কল্পিত) বিভিন্ন প্যাকেজে সাড়ে ১৭ লাখ গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। সরেজমিনে দুদকের তদন্তে সাড়ে ৩২ লাখ গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তাদের অপরাধলব্ধ আয় হয়েছে দুই হাজার ৩৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা পরবর্তী সময়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা অভিনব ও কৌশলী প্রতারণা করেছেন। আর ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. এর সাড়ে আট লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত লাভে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেসটিনির মাত্র ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। যেখানে তাদের আয় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। ফলে গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধের কথা কল্পনা করা যায় না।’
দুদক জানায়, দুই মামলায় মোট ৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন উভয় মামলার আসামি হিসেবে রয়েছেন।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় দায়েরকৃত ৩২ নম্বর মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তে আরও সাতজনের নাম আসামির তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এ মামলায় দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকা পাচারের দায়ে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এতে আসামিরা হলেন- ডিটিপিএল এবং ডি২কে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রফিকুল আমীন, ডিটিপিএলের চেয়ারম্যান এবং ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) এম হারুন-আর-রশিদ, ডি২কে এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ডেসটিনি গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক (ডেসটিনি-২০০০ লি. এর প্রাক্তন পরিচালক ও ডিএমডি), ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান (ডেসটিনি-২০০০ লি. এর প্রাক্তন পরিচালক), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মেজবাহ উদ্দিন (প্রাক্তন পরিচালক), ডি২কে পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, মিসেস ফারহা দিবা, মিসেস জামশেদ আরা চৌধুরী, গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান (প্রাক্তন পরিচালক ডেসটিনি-২০০০ লি.), ভাইস প্রেসিডেন্ট নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস (ডেসটিনি-২০০০ লি. এর প্রাক্তন পরিচালক), ডেসটিনি-২০০০ লি. এর শেয়ার হোল্ডার ও পিএইডি এক্সিকিউটিভ জসিমউদ্দিন ভুইয়া, ডেসটিনি-২০০০ লি. এর শেয়ার হোল্ডার ও ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ জাকির হোসেন, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের সোহেল, মোসাদ্দেক আলী খান, আব্দুল মান্নান এবং ডেসটিনি-২০০০ লি. এর শেয়ার হোল্ডার ও ক্রাউন এক্সিকিউটিভ আবুল কালাম আজাদ।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় দায়েরকৃত ৩৩ নম্বর মামলায় ২২ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তে আরও ২৪ জনের নাম আসামির তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এ মামলায় এক হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৫ টাকা পাচারের দায়ে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এতে আসামিরা হলেন- ডেসটিনি-২০০০ লি. এর এমডি ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. এর সভাপতি মোহাম্মদ রফিকুল আমীন, ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জে. (অব.) এম হারুন-আর-রশিদ, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, প্রাক্তন ডিএমডি মোহাম্মদ গোফরানুল হক, প্রাক্তন পরিচালক মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, মো. মেজবাহ উদ্দিন (স্বপন), ডেসটিনি-২০০০ লি. এর পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, মিসেস ফারহা দিবা, মিসেস জামশেদ আরা চৌধুরী, প্রাক্তন পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, ডিএমসিএসএলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, প্রাক্তন যুগ্ম-সম্পাদক আজাদ রহমান, প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ মো. আকবর হোসেন সুমন, ডিএমসিএসএলের প্রাক্তন সদস্য মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সাইদুল ইসলাম খান (রুবেল), মো. সুমন আলী খান, মিসেস শিরীন আক্তার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, ডায়মন্ড বিল্ডার্স লি. এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও গ্রুপের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, বেস্ট এভিয়েশন লি. এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. এম হায়দারুজ্জামান, উপদেষ্টা মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, প্রাক্তন হেড অব ফিন্যান্স কাজী মো. ফজলুল করিম, প্রাক্তন সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মোল্লা আল আমিন, ইসলাম ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. শফিউল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ মো. জিয়াউল হক মোল্লা, প্রাক্তন ম্যানেজার সিকদার কবিরুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ মো. ফিরোজ আলম, মমতাজ এন্টারপ্রাইজ ও গোল্ডেন লাইন এসোসিয়েটস এর মালিক ওমর ফারুক, ডেসটিনি গ্রুপের কন্ট্রোলার সুনীল বরন কর্মকার, ডেসটিনি এয়ার সিস্টেমস লি. এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আকতার, ডেসটিনি নিহাজ জুট স্পিনার্স লি. এর চেয়ারম্যান এস সহিদুজ্জামান চয়ন, ডায়মন্ড বিল্ডার্স এর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান তপন, ডিএমসিএসএলের সহ-সভাপতি মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান, সম্পাদক এসএম আহসানুল কবির (বিপ্লব), প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ এএইচএম আতাউর রহমান রেজা, সদস্য গোলাম কিবরিয়া (মিল্টন), মো. আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন, ডেসটিনি-২০০০ লি. এর ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ মিসেস জেসমিন আক্তার (মিলন) এবং ডেসটিনি গ্রুপের অ্যাডভাইসর মো. শফিকুল হক।
ডেসটিনির দুর্নীতি অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি দল গঠন করে কমিশন। এ দলের সদস্যরা হলেন- দুদকের উপ-পরিচালক বেনজীর আহম্মদ, মাহমুদ হাসান, এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা, মো. মোজাহার আলী সরদার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম।
(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এমএআর/আরকে/জানুয়ারি ১৬, ২০১৪)