ইনকিলাবের ছাপাখানা সিলগালা, আটক ৩
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘মিথ্যা’ সংবাদ প্রচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় দৈনিক ইনকিলাব কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় সেখান থেকে বার্তা সম্পাদকসহ চারজনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া জব্দ করা হয় কয়েকটি কম্পিউটার। সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে সার্ভার কক্ষ ও ছাপাখানা। পরে রাত সাড়ে এগারটায় ১ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাজধানীর ওয়ারী থানায় বৃহস্পতিবার তথ্যপ্রযুক্তি আইনে (আইসিটি অ্যাক্ট) মামলাটি করা হয়। মামলা নং ১১।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে পুলিশ ও ডিবি সদস্যের সমন্বয়ে একটি টিম সেখানে তল্লাশি অভিযান চালায়। পরে টিকাটুলিতে অবস্থিত পত্রিকাটির কার্যালয় থেকে বার্তা সম্পাদক রবিউল্লাহ রবি, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিক মোহাম্মদ, কূটনৈতিক প্রতিবেদক আহমেদ আতিক ও সিনিয়র প্রতিবেদক আফজাল বারীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে এগারটায় আফজাল বারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পত্রিকাটির বিশেষ প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা দ্য রিপোর্টকে বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের একটি দল বার্তাকক্ষসহ কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি শুরু করে। তারা রিপোর্টারদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে যাওয়ার সময় বার্তা সম্পাদকসহ চারজনকে নিয়ে যায়। এ ছাড়া তারা পাঁচটি কম্পিউটার নিয়ে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ইনকিলাব পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে আলামত জব্দের উদ্দেশে অভিযান চালানো হয়েছে।
ডিএমপির সহকারী কমশিনার (মিডিয়া সেন্টার) আবু ইউসুফ বলেন, ইনকিলাবের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সেখানে অভিযান চালিয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, আলামত হিসেবে কয়েকটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হবে।
ইনকিলাবের বিরুদ্ধে মামলা
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওয়ারী থানায় মিথ্যা সংবাদ প্রচারের অভিযোগে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ১১।
মামলায় দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, পত্রিকার প্রকাশক, প্রধান বার্তা সম্পাদক, প্রকাশিত সংবাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে আসামি করা হয়। এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫৭(১), ৫৭(২), ৬৬(১), ৬৬(২) ধারা সংযুক্ত পেনাল কোডের ৫০৫(গ) ও (ঘ) ধারায় অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বাদী এসআই জাহাঙ্গীর আলম মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ১৬/০১/২০১৪ ইং তারিখে ঢাকার ২/১ আর কে মিশন রোডের ইনকিলাব এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড পাবলিকেশন লিমিটেডের দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ওয়েবসাইটে এবং ওই ঠিকানা হতে প্রকাশিত দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় ‘সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অপারেশনে ভারতীয় বাহিনীর সহায়তা’ শিরোনামে একটি মিথ্যা সংবাদ প্রচারিত হয়।
সংবাদে বলা হয় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সাতক্ষীরায় গণআন্দোলন দমাতে সরকার ভারতীয় বাহিনীকে অপারেশনে নামিয়েছে। এ অপারেশন পরিচালিত হয়েছিল যৌথবাহিনীর সহায়তায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দিল্লির কাছে এ সেনা সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়। এরই আলোকে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সাতক্ষীরায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায় অভিযান পরিচালিত হয়। সাতক্ষীরার পাঁচটি উপজেলায় পরিচালিত এ অভিযানে স্থানীয় জনগণের ওপর ব্যাপক জুলুম-নির্যাতন চালানো হয় বলে সংবাদমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, পত্রিকার প্রকাশক, প্রধান বার্তা সম্পাদক, প্রকাশিত সংবাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক কোনো প্রকার যাচাই-বাচাই না করে পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে এবং অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ও প্ররোচনায় উল্লেখিত মিথ্যা এবং সংবেদনশীল সংবাদ তাদের পত্রিকার ওয়েবসাইট ও পত্রিকায় প্রচার করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫৭(১), ৫৭(২), ৬৬(১), ৬৬(২) ধারা সংযুক্ত পেনাল কোডের ৫০৫(গ) ও (ঘ) ধারায় অপরাধ করেছে- বিধায় উল্লিখিত ধারায় একটি নিয়মিত মামরা রুজু করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
শুক্রবার প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি
এদিকে দৈনিক ইনকিলাবে অভিযান, সাংবাদিক আটক ও পত্রিকা বন্ধের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
(দ্য রিপোর্ট/এনইউডি/এমএআর/শাহ/জানুয়ারি ১৬, ২০১৪)