নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশে এটি প্রথম উদ্যোগ বলে জানা গেছে। এ জন্য ৭৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি)। এটি বাস্তবায়িত হলে যে পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন হবে তাতে সুগার মিলের নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বাড়তিটুকু জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।

এই বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ইতোমধ্যেই যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। শিগগিরই একনেকে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জানান, এ প্রকল্পটির বিপরীতে চলতি অর্থবছর এমটিবিএফ (মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো) এর আওতায় প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রয়েছে বলে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরে অর্থের চাহিদা ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্পটি সমাপ্তির পর নর্থবেঙ্গল সুগার মিলে বিদ্যুৎ ও রিফাইন্ড সুগার উৎপাদনে কয়লা সরবরাহে এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের নিশ্চয়তা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিনিকল, সংস্থা, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে নর্থবেঙ্গল চিনিকলে স্থাপিতব্য সুগাররিফাইনারিতে বার্ষিক ৪০ হাজার টন সাদা চিনি উৎপাদনের পাশাপাশি এই চিনি কলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। উৎপাদিতব্য বিদ্যুতের মধ্যে নিজস্ব প্রয়োজনে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহারের পর বাকি ৪ মেগাওয়াট পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে অথবা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। এর ফলে নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের অতিরিক্ত আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চিনিকলগুলোতে অমৌসুমে চিনি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। এর পর চিনিকলসমূহে সারাবছর বিদ্যুৎ ও অমৌসুমে রিফাইন্ড সুগার উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনা করে নর্থবেঙ্গল, রাজশাহী, জয়পুরহাট, মোবারকগঞ্জ ও শ্যামপুর এই ৫টি চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপনের সুপারিশ করে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় সুপারিশকৃত ৫টি চিনিকলের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় অবস্থিত নর্থবেঙ্গল চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটির সফলতার পর পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও রিফাইনারির জন্য প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী অন্য চিনিকলগুলোতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

সূত্র জানায়, সরকারি খাতের ১৫টি চিনিকলের বার্ষিক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার ৪৪০ টন। আখের অভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১ লাখ টনেরও কম চিনি উৎপাদন হচ্ছে। চিনিকলগুলো উৎপাদন সময়ে নিজস্ব বয়লারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে থাকে। তবে চিনি উৎপাদন শুধু মৌসুমকালীন ৩ থেকে ৪ মাস সীমাবদ্ধ থাকায় বছরের অবশিষ্ট সময়গুলো চিনিকল বন্ধ থাকে। দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট পরিস্থিতির কারণে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিভিন্ন বিকল্প উৎস সন্ধানের উপর গুরুত্বারোপ করেছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নর্থবেঙ্গল সুগার মিল বিষয়ে এই প্রকল্পটি প্রথমে ২৯৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২০১১ সালের ৮ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশের আলোকে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পূনর্গঠন করে শিল্প মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে পারেনি। কেননা সভার সুপারিশে ছিল চিনি উৎপাদনে শিল্প মন্ত্রণালয় বিএসএফআইসিকে ভর্তুকি প্রদানের নিশ্চয়তা, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিইআরসি-এর কাছ থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ, স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে যোগাযোগকরণ এবং জ্বালানি বিভাগ থেকে কয়লা প্রাপ্তির নিশ্চয়তাপত্র সংগ্রহ করে তা ডিপিপিতে সংযোজন করে ডিপিপি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে বলা হয়।

পরবর্তীকালে পিইসি সভার সুপারিশ অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় চিনি উৎপাদনে ভর্তুতি প্রদানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু অর্থ বিভাগ চিনি উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে প্রকল্পের স্কোপ হ্রাস করে নতুন করে ডিপিপি তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় শিল্প মন্ত্রণালয়।

২০১২ সালের ২ সেপ্টেম্বর নতুন ডিপিপির উপর পরিকল্পনা কমিশনে পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এইচএসএম/জানুয়ারি ১৬, ২০১৪)