মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : দুই বাংলার চলচ্চিত্রের প্রবাদ-প্রতীম অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। তার অভিনয় প্রতিভা দিয়ে তার সমকালে যেভাবে দর্শক হৃদয় আলোড়িত করেছিলেন এখন পর্যন্ত তাতে টান পড়েনি। কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর মহাপ্রয়াণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা নানাভাবে তাদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাদের বক্তব্যের সারাংশ নিয়েই দ্য রিপোর্টের এ আয়োজন।

‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ ‘সিনেমার পরিচালক মশিউদ্দিন শাকের বলেন, ‘যে সব চলচ্চিত্রে সূচিত্রা অভিনয় করেছেন সেগুলো নব্য বাস্তবতা ধারার চলচ্চিত্র ছিল না, মধ্যবিত্তের চাওয়া-পাওয়া, টানাপোড়েনের মধ্যে বেঁচে থাকা নানা মূল্যবোধের নিরিখে নির্মিত চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। এ ধরনের চলচ্চিত্র অনেকাংশে তারকা নির্ভর হতে হয়। শুধু সূচিত্রা কেন যদি আপনি তার অভিনীত সিনেমাগুলো দেখে থাকেন নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন অন্যান্য কুশিলবরাও অনেক দক্ষ এবং তারকাখ্যাতি সম্পন্ন। ফলে নির্মাতা, কলাকুশলী ও পার্শ্বঅভিনেতা-অভিনেত্রীদের সমন্বিত একটা প্রচেষ্টায় দারুণ কতগুলো চলচ্চিত্র আমরা পেয়েছি।

তার সম্পর্কে আলাদা করে যেটা বলতে হয় সেটা হলো মধ্যবিত্তের সেন্টিমেন্টগুলো খুব ভলোভাবে উপলব্ধি করেছেন শ্রুতিমধুর কণ্ঠস্বর, সুশ্রী চেহারায় চমৎকার অঙ্গভঙ্গিমা দিয়ে তা উপস্থাপন করেছেন। এ কারণেই বলতে পারেন তার চলচ্চিত্র এত দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।’

বিশিষ্ট চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, ‘অভিনয়ের রানী তো সুচিত্রা সেন। একজন বাঙালি যেভাবে তার রমনীকে কল্পনা করে-শাড়ি পরা, কথা বলার ঢং, শারীরিক সৌন্দর্য সর্বোপরি চিরায়ত বাঙালি নারীর প্রতিটি বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে বিদ্যমান। একজন বাঙালি নারীর চিন্তা-চেতনাকে তার অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।’

লাল কাজল, বিয়ের ফুল, তোমাকে চাই এরকম অনেকগুলো জনপ্রিয় সিনেমার পরিচালক মতিন রহমান বলেন, ‘শারীরিক সৌন্দর্য, সিমপ্লিসিটি, চমৎকার সংলাপ প্রক্ষেপণ এবং অঙ্গভঙ্গির রকমারি কসরত দিয়ে সুচিত্রা সেন অভিনয়কে বিশ্বস্ততার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। অসাধারণ অভিনয় প্রতিভার জন্য বাংলা চলচ্চিত্রের চিরায়ত প্রতীক হিসেবে বেঁচে থাকবেন তিনি।’

বিকল পাখির গান, ডুবসাঁতার প্রভৃতি চলচ্চিত্রের নির্মাতা নুরুল আলম আতিক বলেন, ‘সুচিত্রা সেন বাঙালি নারীর চিরায়ত রূপ নিয়ে প্রতিটি চলচ্চিত্রে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন। আমার মনে হয় এ কারণেই দর্শক এত ব্যাপকভাবে তাকে গ্রহণ করেছে।’

‘স্বপ্নডানায়’ চলচ্চিত্রের পরিচালক গোলাম রব্বানী বিপ্লব বলেন, ‘মানুষের কিছু গুণ থাকে, প্রাকৃতিক সেই অসাধারণ গুণ নিয়ে জন্মেছিলেন সুচিত্রা সেন। সকল মোহ ত্যাগ করে দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে আড়ালে যাওয়ার বিষয়টাকে উপলব্ধির চেষ্টা করলে তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট ধারণা পাই। চলচ্চিত্রের প্রতি অঙ্গীকার এবং অভিনয়ের দক্ষতা নিয়ে যুগ যুগ ধরে সুচিত্রা সেন দর্শক হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’

‘উত্তরের সুর’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলী সুচিত্রা সম্পর্কে বলেন, ‘দর্শকের অনুভূতির জায়গাটাকে উপলব্ধি করে একটা নির্দিষ্ট সময়ে চলচ্চিত্র থেকে আড়াল হয়ে গেলেন তিনি। যে কারণে আজও যৌবনের সৌন্দর্য ধারণ করে দর্শক হৃদয়ে বেঁচে আছেন তিনি। এ রকম ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এইচএসএম/আরকে/জানুয়ারি ১৭, ২০১৪)