ইসহাক ফারুকী, দ্য রিপোর্ট : কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন আর নেই- এ কথা জেনে লাখো ভক্তের চোখে-মুখে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অনেক গৃহিণী সকালের নাস্তা বানাতে গিয়ে যখন তাদের প্রিয় নায়িকার মৃত্যুর খবর শোনেন। মুষড়ে পড়েন। চোখের কোণায় জমে পানি। সকাল বেলার চা পান করতে গিয়ে টিভিতে খবর দেখার পর স্মৃতির অতলে হারিয়ে যান গৃহকর্তারা। মনের কোণে মোচড় দিয়ে ওঠে।

এক জীবন পর্দায় সরব উপস্থিতি, তারপর নায়িকা থাকতে থাকতেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। নায়িকা থাকাকালীন ১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। তবে পর্দার আড়ালে চলে গিয়ে ২০০৫ সালে ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘দাদাসাহেব ফালকে’ নিতে যাননি দিল্লিতে।

এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো... গানটির মতো তার নায়িকা থাকার পথ শেষ হয়নি। সবার মনেই তিনি নায়িকা হয়ে আছেন।

১৯৫২ সালে শেষ কোথায় চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করলেও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। কিন্তু সুচিত্রা সেন বুঝেছিলেন, তার শেষ কোথায়? ১৯৭৮ সালে অভিনয়জীবনকে বিদায় জানান।

অনেক আলোড়ন, আলোচনা, সম্মোহন, অভিনন্দন-সবকিছু হাতের মুঠোয় নিয়েছিলেন ২৫ বছরের অভিনয় জীবনে। ১৯৫৩ সালে সাড়ে চুয়াত্তর চলচ্চিত্রটি তার জীবনকে অন্যদিকে নিয়ে যায়। অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হন রমা দাশগুপ্ত। তারপর অরুণ-রমার একের পর এক বাজিমাত। বাস্তবের অরুণ পর্দার উত্তম আর বাস্তবের রমা পর্দার সুচিত্রাকে দর্শক নিয়েছে রোমান্টিকতার অপূর্ব জুটি হিসেবে।

সম্পর্কের হিসেব নিকেশ হোক বা সময়ের প্রয়োজনে, সুচিত্রা অভিনয় করেছেন ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), শাপমোচন (১৯৫৫), সবার উপরে (১৯৫৫), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হলো দেরি (১৯৫৭), হারানো সুর (১৯৫৭), দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯), সপ্তপদী (১৯৬১), বিপাশা (১৯৬২), চাওয়া-পাওয়া (১৯৬২), সাত পাকে বাঁধা (১৯৬৩), হসপিটাল (১৯৬৪), শিল্পী (১৯৬৫), ইন্দ্রাণী (১৯৫৮), রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), সূর্য তোরণ (১৯৫৮), উত্তর ফাল্গুনি (১৯৬৩), গৃহদাহ (১৯৬৭), ফরিয়াদ, দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪), দত্তা (১৯৭৬), প্রণয় পাশা, প্রিয় বান্ধবী।

ঋজু ভঙ্গি, সাবলীল অভিনয়, সময়োপযোগী সংলাপ কথন-সবকিছুই যেন সুচিত্রাকে নিয়ে গেছে অসামান্য উচ্চতায়। ৮২ টি বসন্ত পার করে হারিয়ে গেলেন ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি। সঙ্গে নিয়ে গেলেন ভক্তদের ভালবাসা। যে ভালোবাসা তাকে বাংলা চলচ্চিত্রে অমরত্ব দিয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/আইএফ/এইচএসএম/ আরকে/জানুয়ারি ১৭, ২০১৪)