জামায়াত ছেড়ে আইএলপি গঠনের পথে নতুন প্রজন্ম!
শীর্ষ নেতাদের অনেকেই একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় চাপে পড়েছে জামায়াতে ইসলামীর নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীরা। জামায়াতের গায়ে লেগে থাকা যুদ্ধাপরাধের দায় নিয়ে নতুন প্রজন্ম চলতে চান না। এ অবস্থার উত্তরণ হবে তেমনটিও তারা মনে করছেন না। তাই জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে নতুন প্রজন্ম নতুন পরিচয়ে রাজনীতিতে নামার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে।
একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে, জামায়াত ছেড়ে নতুন প্রজন্মের অনেকেই ‘ইসলামী লিবারেল পার্টি’বা আইএলপি নামে দল গঠন করার পথে অগ্রসর হচ্ছেন। বর্তমান জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির দু’জন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, প্রথম সারিতে থাকা বেশ কয়েকজন নেতা নতুন দলের নেতৃত্ব দেবেন এমনটি মনে করছেন নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীরা। এদের মধ্যে একজন আইনজীবী ও অপরজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং ছাত্রশিবিরের প্রথম সারির সাবেক নেতা। এই দু’জনের একজন বর্তমানে ইউরোপে রয়েছেন।
এদিকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সূত্র বলছে, তারা জামায়াত সম্পর্কে এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন। জামায়াতের নতুন প্রজন্মের যে সব নেতাকর্মী নতুন দল গঠনের ব্যাপারে সক্রিয় তারা সরাসরি কোনো কথা বলতে চাচ্ছেন না। বিশেষ করে পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্কে তারা অনেকটা আড়ালে-আবডালে থেকেই এই কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
সূত্র আরো বলছে, আগামী এপ্রিলের মধ্যেই আইএলপি আত্মপ্রকাশ করতে পারে। শিবিরের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে সরাসরি বলেছেন, নতুন দলে শিবিরের একটি অংশ যোগদান করবে।
এ সব নেতার মতে, একাত্তরে যাদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছর ছিল তারা তো যুদ্ধাপরাধী নয়। এরপরও শীর্ষ নেতাদের কারণে এ ধরনের অপবাদ মাথায় নিয়ে রাজনীতি করার কোনো অর্থ হয় না। আর সে জন্যই নতুন দলের দিকে আগ্রহ বাড়ছে। নতুন দলের যে নাম ঠিক করা হয়েছে সেটি যদি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে বাধা পায় তাহলে বিকল্প নাম কী হবে তাও ঠিক করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল দেশে ফিরে আসার পরই নতুন দল চূড়ান্ত করার কাজ সম্পন্ন হবে। দলে থাকবেন ব্যবসায়ী, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবী।
নতুন দল সম্পর্কে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. ইকবাল বলেন, ‘ব্যারিস্টার রাজ্জাক দেশের বাইরে গিয়েছেন।’ এরপর তার দেশের বাইরের ফোনে একাধিকবার ফোন করে তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও ব্যারিস্টার রাজ্জাক কোনো উত্তর দেননি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আপিল বিভাগে শুনানির পর নিবন্ধন ফিরে না পেলে জামায়াত বিকল্প পথে হাঁটবে কি না, এ ক্ষেত্রে নতুন কোনো দল গঠন, কোনো ইসলামী বা সমমনা দলে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।
তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধন এখনও বাতিল হয়নি। আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে। আশা করছি আমরা ন্যায় বিচার পাব। যদি তা না হয় তাহলে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড বা ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি কিংবা তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টিকে অনুসরণ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বাস্তবতা, সমস্যা-সম্ভাবনা এবং ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশ্ব পরিস্থিতিসহ ইসলামের অনুসৃত নীতি ও কৌশলকে সামনে রেখেই প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দলীয় পলিসি নির্ধারণ করে কাজ করে থাকি।’
সূত্র মতে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড বা জাস্টিস পার্টি এবং তুরস্কের বর্তমান ক্ষমতাসীন একে পার্টির সঙ্গে জামায়াতের আদর্শিক মিল রয়েছে। প্রায় সমসাময়িক সময়ে এ সব দল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সব দল বেশ কয়েকবার নিষিদ্ধ হয়। এরপর নতুন নামে রাজনীতি করতে থাকে দলগুলো।
সূত্রটি আরও জানায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জামায়াতে ইসলামী ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ-আইডিএল নামে তাদের কার্যক্রম চালায়। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের সরকার বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলে জামায়াতে ইসলামী আবারও রাজনীতি করার সুযোগ পায়।
(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/এইচএসএম/এএল/ এনআই/জানুয়ারি ১৭, ২০১৪)