তাওফীক আল্-হাকীমের উপন্যাস
লায়লাতুয্ যিফাফ্
তরজমা : ড. এমএ মোত্তালিব (পূর্ব প্রকাশের পর)
(তিন)
দেখতে দেখতে বাকী ক’টা দিন খুব দ্রুত চলে গেল। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও সীমাহীন ভাবনা তো আছেই। সামন্য দু’-একটা কথা-বার্তা, কদাচিৎ মুচকি হাসি আর পারতপক্ষে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজেকে লুকিয়ে রেখে চলে কনে। চেহারার ওপর যেন এক অজানা দুঃশ্চিন্তার কালো মেঘের ঘনঘটা বিরাজ করতে থাকে। যখন বর কথা বলে, উত্তর দেয় চোখের ঈশারায়। যাতে হাজারো রহস্য নিহিত। তার এ অব্যক্ত কথাগুলো বরও বোঝে এবং এর রহস্যও সে জানে। অন্তরের গভীরে লুক্কায়িত ভাষায় সে বরের অনুভূতিকে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ যেন এক দীর্ঘ কবিতা। সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে আলাদা করে দেওয়ার অসহনীয় দায়িত্ববোধ তাকে খান খান করে দেয়। তবুও সে নিজের প্রতি হৃদয়কে একপ্রকার পাষাণ করে তা সহ্য করে চলে। যাতে করে কনের মায়ের সামনেও দুর্ব্যবহারে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারে।
বিচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশের জন্য সর্বশেষ একটা দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যায়। একমাত্র দুলালীর অনাহুত বিচ্ছেদের বিষয়টি তার মায়ের ওপর যাতে বিরূপ কোনো প্রভাব না ফেলে সে-দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়। দৃষ্টি রাখা হয় সদ্য বিবাহিতা ললনার নির্মল জীবনে যাতে কোনো দাগ বা কালিমা না পড়ে সে-দিকে।
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই নব দম্পতির বিচ্ছেদের সে চূড়ান্ত ও সর্বশেষ রাতটি এসে পড়ে। বর স্থির করে ঐদিন সে গভীর রাতে বাড়ি ফিরবে। নিদ্রাহীন দীর্ঘ রাতের ক্লান্তি ততক্ষণে স্ত্রীকে ঘুমে কাতর করে ফেলবে। কিন্তু গভীর রাতে বাড়ি ফিরে চোখ একেবারে চড়ক গাছ। দেখে কনে খাটের ওপর হাত-পা ছেড়ে দিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। প্রদীপের মিটি মিটি আলো তার মুখের ওপর এক নিদারূণ মলিনতার সৃষ্টি করেছে। মনে হচ্ছে সে যেন তার চোখ দু'টোকে ছাদের সাথে গেঁথে ফেলেছে। ঘরে ঢুকে বর বলে :
- কী আশ্চর্য! এখনও তুমি ঘুমোও নি?
- না! আপনার ফিরে আসার অপেক্ষা করছিলাম।
- ইশ্! আমি যদি জানতাম তবে তোমার জন্য সকাল সকালই ফিরে আসতাম।
- সেটা অবশ্য আপনি ঠিকই জানেন।
- এ আবার কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা-বার্তা তোমার, আর তোমার চেহারাই বা এত বিষণ্ণ কেন?
- কেন! এখানে তো এমন কিছু নেই যা আমাকে আনন্দিত কিংবা উৎফুল্ল করবে।
- বর প্রসঙ্গ বদলে বলে, কেন আজকের রাতটা তো তোমার জন্য আনন্দ ও খুশীরই হওয়ার কথা। আগামীকাল থেকেই তুমি একেবারে বাধা-বন্ধনহীন মুক্ত স্বাধীন। যাকে ভালো লাগবে তাঁর সাথেই দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে সুখের সংসার করতে পারবে।
- এত আপনি শুধু নিজের অনুভূতিকেই ব্যক্ত করলেন।
- তোমার ব্যাপারে আমার অনুভূতি বেশী কিছু তো প্রকাশ করে নি। যে-দিন থেকে তোমার সাথে এ ঘরে অবস্থান করছি- আমাদের স্মৃতিময় বাসরের প্রথম রাত, তখন থেকে শুধু তোমার মতামতকেই এককভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছি। তোমার অবস্থা বিবেচনা করে সংকটময় সমস্যা উত্তরণের সকল ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে তোমার সাথে একটা সমঝোতাও করেছি। আমার তো মনে হয় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সমস্যাটি উত্তরণে আমি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করি নি।
- হাঁ! তা ঠিক আছে। সততা ও ভদ্রতায় আপনি সত্যিই এক অনন্য মানুষ।
- আল্-হামদুলিল্লাহ! যাক এটাই আমার চরম পাওয়া।
ক্ষণিকের তরে তাদের মাঝে এক শ্বাসরুদ্ধকর নীরবতা নেমে আসে। অব্যক্ত কিছু বলতে কনের ঠোঁট নড়ে ওঠে কিন্তু তা প্রকাশ না হয়ে আবার ঠোঁটের কোণাতেই মিলিয়ে যায়। পরিশেষে কনে বুকে সাহস সঞ্চার করে বলে :
- সময় কিন্তু ঘনিয়ে আসছে।
- সে হুঁশ আমার আছে।
- কি? আপনি এখনও কি আমার সেই আবেগকেই মনে রাখতে চান? নাকি নিজের স্বার্থ উদ্ধারে বিষয়টিকে বুঝেও না বোঝার ভান করতেছেন? ঠিক আছে আপনার যা ইচ্ছে তাই করেন, তবে আমার কাছে আপনার এ উদাসীন ভাব কিন্তু মোটেও ভালো লাগছে না। আপনার এ সংকীর্ণ মনোভাব আমার মনকে খান খান করে দিচ্ছে। আমার কথাটা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মনে হয় আপনার জন্য কল্যাণকর। এ ব্যাপারে আপনার কাছে আমি কিছুই আবদার করব না। আপনার সীমাহীন উদারতা ও অকৃত্রিম মহানুভবতার কাছে এর চেয়ে বেশী কিছু চাওয়া আমার উচিতও হবে না। কাজেই আমার মনে যা আছে তাই হবে।
- স্পষ্ট করে বলো, তুমি কী বলতে চাচ্ছ। সব সময় এবং সব বিষয় খোলাখুলি করে বলাই উচিৎ।
- আপনি আমাকে তালাক দিলে আমি আত্মহত্যা করব- এ জীবনই আর রাখব না। মরে যাব।
কথাগুলো সে অতিদ্রুত একটানা বলে যায়। তারপর আবার দু’হাতের তালুর মাঝে চাঁদবরণ মুখখানা লুকিয়ে ফেলে। তার দ্ব্যর্থহীন কথার মধ্যে কোনো খাঁত নেই। কণ্ঠে উচ্চারিত প্রতিটিশব্দই যেন তার অন্তরের কথা। সত্যিই যেন সে আত্মহত্যা করে ফেলবে। এ মুহূর্তে বরের মুখে যেন কোনো ভাষা নেই। নিরূপায় বর পোষা-বিড়ালের ন্যায় খাটের এক কোণায় গিয়ে বসে। অনুরোধের ভঙ্গিতে তার হাত চেপে ধরে। বলে :
- লক্ষ্মীটি আমার শোনো! তুমি যে অন্য আর একজনকে ভালোবাসো এ স্মৃতি ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। ফুল-শয্যার প্রথম রাতে তোমার চোখে-মুখে ভালোবাসার যে ছাপ আমি দেখেছি তা কেমনে ভুলি, বলো?
- আমি জানি, আমার সে অপরাধ আপনি কখনই ক্ষমা করবেন না। এর জন্য আমাকে যে শাস্তি দিতে চান তাই আমি মাথা পেতে নিব। তবু আপনার নিকট আমার একটাই আরজী আমাকে ক্ষমা করে দিন। বাসর রাতে যে ব্যক্তির ভালোবাসার কথা আমি আপনাকে বলেছিলাম তা নিতান্তই আমার আবেগ। শিশুসূলভ আবেগ তাড়িত হয়েই আমি কথাগুলো বলেছিলাম। ভালোবাসা কী জিনিস তখনও আমি তা বুঝতাম না!
- তা ঠিক আছে, আমি তোমার কথাকে মোটেও মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে আমার বিশ্বাস, তুমি আমার অবস্থানটাও বুঝতে পারছ।
- হাঁ, অবশ্যই! অবশ্যই আমি আপনার অবস্থান অনুমান করতে পারছি। আপনিও যে কি পেরেশানীর মধ্যে আছেন সেটাও আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। আপনার কোন শিষ্টাচারিতা যে তার সম্পর্কে কোনো কিছু জানা থেকে বারণ করেছে সে প্রশ্নটিও আমার জানা। কিন্তু আমি কসম করে বলতে পারি আমার এবং ঐ ব্যক্তির মাঝের সম্পর্ক নির্লজ্জ কোনো কুসম্পর্ক ছিল না এবং ছিল না কোনো নোংরা ভাব বিনিময়। পুরো অবস্থাটা ছিল এমন- আমরা যখন আব্বাসী এলাকায় থাকতাম তখন সে ছিল আমাদের প্রতিবেশী। এলাকার অন্যান্য যুবতীদের ন্যায় আমিও সামরিক পোষাক পরিহিত ছিপছিপে গড়নের ঐ ব্যক্তিকে আসা-যাওয়া করতে দেখতাম। পথে দেখা হলে সেও আমাকে সালাম করত আমিও তার সালামের উত্তর দিতাম। সে টেলিফোনে মাঝে মধ্যে আমার সাথে কথা বলত, খোঁজ-খবর নিত। এতটুকুই। কিন্তু কখনই আমি তার সাথে একা কোথাও যাই নি বা নির্জনে কোথাও তার সাথে আড্ডা দেই নি- এ কথা আমি হলফ করে বলতে পারি। আপনি আমাকে যা ছুঁয়ে বলতে বলবেন আমি তাই ছুঁয়ে বলতে পারব। আর আমাকে যদি জীবনসঙ্গী করেন তবে অচিরেই আপনি আমার কথার সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।
- না তোমাকে কসমও করতে হবে না, কোনো কিছু ছুঁয়েও বলতে হবে না। আমি তোমার চোখ-মুখেই তোমার কথার সত্যতার প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি। আর এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আমি আশংকা করছি অন্য বিষয়। সত্যিই কি তোমার চিন্তা-ভাবনা এ রকম? আর এ ব্যাপারে তুমি কি নিশ্চিত?
- হাঁ, অবশ্যই আমি নিশ্চিত।
- তা হলে তুমি পূর্বের ভালোবাসার সম্পর্ককে কীভাবে ছিন্ন করবে?
- বার বার আপনার ঐ একই কথা। ভালোবাসা কী জিনিস আপনি তো তাই জানতেন না। আমিই তো আপনাকে ভালোবাসার মর্ম বুঝালাম। ভালোবাসা তড়িৎ বিদ্যুতের কোনো চমক নয়, যা হঠাৎ দৃষ্টিহরণ করে। কিংবা ক্ষণিকের এমন কোনো আবেগ নয়, যা আমাদের মনকে সাময়িক দোলা দিয়ে শেষ হয়ে যাবে। এক কথায় ভালোবাসা ঠুণ্কো কোনো জিনিস নয়। ভালোবাসা এমন এক চিরন্তন বিষয় যা গর্ভস্থ ভ্রূণের ন্যায় তিল তিল করে অস্তিত্ত্ব লাভ করে। তাঁত যন্ত্রের মাধ্যমে একটি একটি করে সূতা বুনন ও একটি একটি করে গিটের মাধ্যমে যেমন একটি পূর্ণাঙ্গ কাপড় তৈরী হয় ভালোবাসার গঠন প্রক্রিয়াও ঠিক তেমনি দু’টি হৃদয়ের সংস্পর্শে ধীরে ধীরে সুদৃঢ় হতে থাকে। আমার কথায় আপনার হয়তো সংশয় হতে পারে। আপনি বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, আপনাকে ছাড়া আমি একটি মুহূর্তও থাকতে পারব না। আমি আপনার সুখ-দুঃখের ভাগী হতে চাই। আপনাকেই আমার প্রয়োজন। আপনি ছাড়া আমার কোনো গতি নেই। নির্জন এ ঘরে আপনার অস্তিত্বই আমার একমাত্র অবলম্বন। আপনার কাশির শব্দ আমার মনে সাহস যোগায়। আপনার অনুপস্থিতি আমার চোখের ঘুম কেড়ে নেয়। মাঝ রাতে হলেও আপনার ফিরে আসা আমাকে আনন্দ দেয়। কাক ডাকা ভোরে ওঠে আপনি যখন জায়নামাজের নীচে মোজা খোঁজেন তখন আমার বেজায় হাসি পায়। আরও হাসি পায় যখন দেখি আপনার জুতো জোড়া এলোমেলো কাপড়ের মধ্যেই লুটোপুটি খাচ্ছে। দাঁড়ি-গোফ কাটতে ফোম লাগানো আপনার মুখখানা আমার কাছে অপরূপ লাগে। আপনার গালে রেজারের প্রতিটি টান আমার হৃদয়েও রেখাপাত করে। প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার সময় আপনার রুমাল নিতে ভুলে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে পুলকিত করে। আমার বিস্ময় লাগে টেবিলের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে কোনো দিন আপনার ভুল হয় না। আপনার পদ্মমুখের মিষ্টি হাঁসির মোহনীয়তা আমার অন্তরাত্মাকে দোলা দেয়।
ভোরবেলা আমি ঘুমের ভান করে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতাম। আবার মাঝে মধ্যে হাই তোলার নামে মিট মিট করে তাকাতাম। আমার মায়ের সামনে আপনার অহেতুক রাগারাগি, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও আমার প্রতি নানা কাজের আদেশ এমনভাবে দিতেন যেন আমি এর প্রতিটি রহস্য অনুধাবন করছি। সব কিছু মিলে বয়ে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত যেন আমার স্মৃতিতে ভাসছে। মনের অজান্তেই যেন আপনি এ সব করতেন। তারপর যখন হঠাৎ মনে হতো- আমি আপনার সত্যিকার স্ত্রী নই; তখনই আমার সাথে শুরু করতেন সীমাহীন দুর্ব্যবহার। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যে আবার স্বাভাবিক। সব কিছু ভুলে গিয়ে অতি আন্তরিকতার সাথে মনোমুগ্ধকর ব্যবহার করতেন। ছুড়ে দিতেন এক ঝুড়ি উপদেশ। আপন করে নিতেন ভালোবাসা-আদর ও সহমর্মিতার বন্ধনে। আমার নতুন নতুন জামা-কাপড়গুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে আপনি যে কি তৎপর ছিলেন তা কখনই ভোলার নয়।
আমিও আপনার প্রতিদিনের চাল-চলন সম্পর্কে কম অভিজ্ঞ হই নি। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস আমার একেবারে জানা। আমি বুঝে ফেলেছি- পরাটা হলে হতে হবে লাল মচ্ মচে। আর ভাত হলে তো সব্জী চাই-ই। শুধু তাই নয় আপনার শোয়ার ভঙ্গি, ঘুমের ভাব সব কিছুই আমার নখদর্পণে। রাতের কোন প্রহরে আপনি কোন কাতে থাকেন, ডান কাতে- না বাম কাতে, তাও আমার দৃষ্টি এড়ায় নি। আপনি ভাবতে পারেন, কীভাবে আপনার এ সবকিছু আমি খেয়াল করলাম? ওগুলো অনুধাবন করা একেবারেই সাধারণ মামূলী ব্যাপার। বরং বলতে পারেন এটা হল তাঁতের ঘূর্ণায়মান্ চাকার এক সূক্ষ্ম কারিশমা। তা হল দাম্পত্য সম্পর্কের গভীর প্রেম।
- তাঁত ! তাঁত-ফাঁত আবার কী? আর তাঁত দিয়ে তুমি কী বুঝাতে চাচ্ছ? শোনো! দয়া করে তুমি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ভুলে যেয়ো না। এটা তো আমাদের উভয়ের সম্মিলিত ও পরিকল্পিত প্লান। যার বাস্তবায়ন এখন একমাত্র তোমার হাতে।
এ কথা শুনে কনে এক রহস্যময় অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তারপর সে জোর গলায় বলতে থাকে :
আমার তরফ থেকে কখনই কোনো আশংকা করবেন না মহাশয়।
এবার বর নীরব-নিথর হয়ে পড়ে। তারপর মাথা উঁচু করে বলে :
- সোনিয়া! ভাববার জন্য আমাকে কিছু সময় দাও।
- আজ কতদিন আপনার মুখ থেকে এ মধুর সুরে ‘সোনিয়া’ ডাক শুনি না । কিন্তু কেন! কেন আমার পক্ষ থেকে আপনার এত ভয়?
- না না । তোমার পক্ষ থেকে মোটেও কোনো ভয়ের কারণ নেই। বরং এ হচ্ছে আমার দীর্ঘ আশার সঞ্চিত ফল। মনের মধ্যে হাজারো বাসনা নিয়ে কঞ্জুস-বখীল যেমন সম্পদ সঞ্চয় করতে থাকে তেমনি। ঠিক আছে লক্ষ্মীটি এখনকার মতো ঘুমিয়ে পড়। সকালে দু’জনে মিলেই আবার চিন্তা-ভাবনা করা যাবে। আমার বিশ্বাস একটা উপায় হবেই।
বর প্রতিদিনের ন্যায় কনের গা হালকা কাঁথার আবরণী দিয়ে ঢেকে দেয়। বাতিও নিভিয়ে ফেলে এবং ঘরের কোণায় পাতা বিছানায় গিয়ে ভাব-গম্ভীর মনে শুয়ে পড়ে।
বর বিছানায় গিয়ে সবেমাত্র গা এলিয়ে দিয়েছে। গায়ে হালকা কাঁথাটা নিতে না নিতেই সে সোনিয়ার কণ্ঠ শুনতে পায়। সে খাট থেকে নেমে আসছে। না, এ কী! সে তো মন্থরগতিতে তার বিছানায় এসে পড়েছে। হায় হায়! কনে চুপে চুপে একদম তার কাঁথার নীচে ঢুকে পড়ছে। একেবারে তার পাশে। তাকে জড়িয়ে ধরছে ও তার শরীরের সাথে একাকার হয়ে মিশে যাচ্ছে আর বলছে :
- তুমিই আমার স্বামী। ঘরে স্বামী, বাইরে স্বামী, মানুষের সামনে স্বামী। এমনকি খোদ আল্লাহর সামনেও তুমিই আমার স্বামী। আমার অন্তর জুড়ে শুধু তুমি। আমার এ বাহুবন্ধন থেকে তোমাকে আর কেউ-কখনও ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
বলতে বলতে সে তাকে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার আবেগে বাহু বন্ধনে জড়িয়ে ধরে। শূন্য বুকের সাথে একাকার করে ফেলে। যে কোল বালিশটিকে জড়িয়ে ধরে এতদিন তার রাত কেটেছে, বুকের সে স্থানেই জুটে বরের স্থান।
এ যে নব-দম্পতির বাসর রাতের দৃশ্য! দাম্পত্য জীবনের ইতিহাসে এ যেন এক বিরল ফুল-শয্যার রাত। আর এটাই তো বাস্তব- দু’টি দেহ একটি মন তার নাম দাম্পত্য জীবন। বর-কনে উভয়েই সজ্জিত বাসর শয্যার জাঁকজমকপূর্ণ খাট ফেলে মাটিকেই তাদের মহামিলনের উত্তম বিছানা হিসেবে গ্রহণ করে। (সংক্ষেপিত)