আজিজুর রহমান
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান ১৯১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি কুষ্টিয়া সদরের হাটশ হরিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখা গানের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। বাংলাভাষী মুসলমান গীতিকারদের মধ্যে গানের সংখ্যায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরই তার স্থান।
১০-১২ বছর বয়সে বাবার মৃত্যু হলে পরিবারের বড় সন্তান আজিজুর রহমান সংসারের হাল ধরেন। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে দিতে হয় তাকে। কিন্তু নানা বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে তিনি স্বশিক্ষিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। পরবর্তী জীবনে তার সংগ্রহে ছিল প্রায় ১০ হাজার বই ও পত্র-পত্রিকা।
১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বেতারে প্রথমে অনিয়মিত এবং পরে নিয়মিতভাবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বেতারে চাকরি করেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত দৈনিক পয়গম পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে প্রকাশিত কিশোর মাসিক 'আলপনী'রও সম্পাদক ছিলেন তিনি।
তার সময়কালে ঢাকার প্রায় প্রখ্যাত সুরকাররা যেমনি তার গানে সুর দিয়েছেন তেমনি গানগুলো গেয়েছেন খ্যাতনামা শিল্পীরা। চলচ্চিত্রের জন্য তিনি অসংখ্য গান লিখেছেন। রাজধানীর বুকে, হারানো দিন ও আগুন্তক প্রভৃতি ছায়াছবির জন্য গান রচনা করেছেন। তার বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে- কারো মনে তুমি দিওনা আঘাত, তোমার নামে তসবিহ খোদা, পলাশ ঢাকা কোকিল ডাকা, রক্ত রঙ্গিন উজ্জ্বল দিন, তারা ভরা রাতে তোমার কথা যে, মনরে এই ভবের নাট্যশালায়, আমি রূপনগরের রাজকন্যা, তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, এই সুন্দর পৃথিবীতে, এই রাত বলে ওগো তুমি আমার ও দেখ ভেবে তুই মন।
তিনি তিন শতাধিক কবিতা রচনা করেছেন। তার কবিতা নবযুগ, নবশক্তি, আনন্দবাজার পত্রিকা, শনিবারের চিঠি, সওগাত, মোহাম্মাদী, আজাদ, বুলবুল পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো। 'ডাইনোসরের রাজ্যে' (১৯৬২), 'জীবজন্তুর কথা' (১৯৬২) ও 'আবহাওয়ার পয়লা কেতাব' তার উল্লেখযোগ্য অনুবাদগ্রন্থ। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- 'আজাদীর বীর সেনানী : কুমারখালীর কাজী মিয়াজান', পাঁচমিশালী গানের সঙ্কলন 'উপলক্ষের গান' (১৯৭০), দেশাত্মবোধক গানের সঙ্কলন 'এই দেশ এই মাটি' (১৯৭০) ও 'ছুটির দিনে' (১৯৬৩)। এ ছাড়া তিনি কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস রচনায় উদ্যোগ নেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বহু মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু কাজটি শেষ করে যেতে পারেননি।
সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সমাজসেবায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া (নদীয়া) ফুড কমিটির সেক্রেটারি, বেঞ্চ অ্যান্ড কোর্ট ডিভিশনের চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া জেলা বোর্ড ও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্যের পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। ছাত্রাবস্থায় মুসলিম ছাত্র আন্দোলনেও ভূমিকা রেখেছেন এবং প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন।
১৯৩১ সালে তিনি বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার ফুল হরিগ্রামের আজহার সিকদারের মেয়ে ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে।
১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সন্মান 'একুশে পদক' (মরণোত্তর) লাভ করেন।
১৯৭৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি গ্যাংগ্রিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবির ইচ্ছানুযায়ী কুষ্টিয়ার হাটশ হরিপুরে সমাধিস্থ করা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/শাহ/জানুয়ারি ১৮, ২০১৪)