জামালপুর সংবাদদাতা : জামালপুরের পুরনো ব্রহ্মপুত্র চরে আবাদকৃত বিপুল পরিমাণ টমেটো দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে টমেটো রফতানি হওয়ায় চাষিসহ এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়ে প্রাণচাঞ্চল্য।

সদরের নান্দিনাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বসানো হয়েছে টমেটোর অস্থায়ী পাইকারি বাজার। এখান থেকেই প্যাকেটজাত হয়ে প্রথমে ট্রাকযোগে চট্টগ্রামে, পরে সেখান থেকে বিমানযোগে চলে যাচ্ছে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী নান্দিনা বাজার থেকে সাদা প্লাস্টিক ও কাগজের কার্টনে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা টমেটো প্যাকেটজাত করছেন।

কথা হয় চট্টগ্রাম থেকে আসা টমেটোর পাইকার মুসলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি দ্য রিপোর্টকে জানান, এই টমেটো প্রথমে আমরা নান্দিনা বাজার থেকে পাইকারি দরে ক্রয় করি। কেনার পর ভালো-মন্দ বাছাই করা হয়। পরে তা প্যাকেটজাত করি। এরপর চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিমানে করে পাঠানো হয় মালয়েশিয়ায়।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ইদানীং মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে জামালপুরের এই টমেটোর ব্যাপক চাহিদা।

চর এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, টমেটোর ভাণ্ডার বলে খ্যাত ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় লক্ষ্মীরচর, রায়েরচর, মোল্লাপাড়া, নামা গজারিয়া, টান গজারিয়া, চর যথার্থপুর, উজানপাড়া, ভাটিপাড়া, রাঙ্গামাটিয়া, রেহাই গজারিয়া, মধ্যেরচর, আলগীরচর, চরপাড়া, নামারচর, কান্দারচর, বারুয়ামারি, সুতিনদী এলাকা, তুলশীরচর ইউনিয়নের চরবাছুর আলগা, মানিকেরচর, বাকচর, হনুমানের চর, বড় ডৌয়াতলা, ছোট ডৌয়াতলা, সাহেবেরচর, টেবিরচর, চরখারচর, গারামারা, টিকরাকান্দি, রানাগাছা ইউনিয়নের চরগোবিন্দবাড়ী, বীরগোবিন্দবাড়ী, খড়খড়িয়ার উত্তরাংশ, লোন্দহচর, শরিফপুর ইউনিয়নের হামিদপুর বানার এলাকা, জয়রামপুর, শরিফপুর, বগালির উত্তরাংশ এবং নরুন্দি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা, তারাগঞ্জ, কোচনধরা, মিরাপুর গ্রামের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে।

লক্ষ্মীরচর এলাকার কৃষক মোবারক আলী, রেজাউল, সোহাগ মিয়া, শেখ আলী, হালিম, ছোরহাব, মোশারফ, গোলাম মোস্তফা, দারোগ আলী, আতাব আলীর সঙ্গে আলাপ হলে তারা দ্য রিপোর্টকে জানান, গত ২০ বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের চরের তপ্ত বালু মাটিতে কৃষকরা নানা সবজি আবাদ করে আর্থিকভাবে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।

এবারই প্রথম এই উৎপাদিত টমেটো মালয়েশিয়াসহ নানা দেশে রফতানি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। জেলার ঐতিহ্যবাহী বড় হাট নান্দিনা বাজার ছাড়াও নরুন্দি, শরিফপুর, বানার, মহেশপুর কালীবাড়ি, তারাগঞ্জ, বারুয়ামারী বাজারে বসানো হয়েছে অস্থায়ী টমেটোর হাট।

হাট ইজারাদার জানান, নান্দিনা বাজারসহ এলাকার বিভিন্ন হাট থেকে প্রতিদিন ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, ফেনীসহ দেশের নানাপ্রান্তে যাচ্ছে। আগামী এক থেকে দেড় মাস এভাবে রফতানি হবে জামালপুরের এই টমেটো।

টমেটো উৎপাদিত এলাকা লক্ষ্মীরচর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান কবীর ও রানাগাছা ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফুল কবীর আকন্দ সোহাগ দ্য রিপোর্টকে জানান, দেশের নানাপ্রান্তসহ মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে টমেটো রফতানি হওয়ায় আগামী দিনে চাষিদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য আরও বেড়ে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম দ্য রিপোর্টকে জানান, জেলায় এবার টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। গুণগত মান, রং ও স্বাদে এ জেলার টমেটোর চাহিদা দেশে-বিদেশে রয়েছে। চর এলাকায় উৎপাদিত টমেটো মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে বলে আমি শুনেছি। এটা জেলার টমেটো চাষিদের জন্য ভালো খবর।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এএস/শাহ/জানুয়ারি ১৮, ২০১৪)