শেয়ার ধারণের নির্দেশনা লঙ্ঘন
ফেঁসে যাচ্ছেন ৩৪ কোম্পানির পরিচালক
দেড় বছর অতিবাহিত হলেও ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত তথ্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) দাখিল করেনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২০ কোম্পানি। এর মধ্যে ১৪ কোম্পানি কমিশনের চিঠির কোনো জবাবই দেয়নি। বাকি ৬ কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে কমিশনে তথ্য দাখিলে ব্যর্থ হয় এবং শেয়ার ধারণের অপারগতার কথা অবহিত করে। এ ছাড়া আরো ১৪ কোম্পানির ৩৫ পরিচালক ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করেই অবৈধভাবে স্বপদে বহাল রয়েছেন। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯-এর ২ সিসি ধারা ভঙ্গের শামিল।
এ সব অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ব্যর্থ পরিচালকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। শাস্তিস্বরূপ এ সব পরিচালক আর স্বপদে থাকতে পারবেন না।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর (২০-এ) ধারা ভঙ্গের অভিযোগে কমিশন ২০ কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে শুনানিতে তলব করে। শুনানিতে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে সিকিউরিটিজ আইনানুসারে এ সব কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ২২ নভেম্বরের প্রজ্ঞাপনে ৬ মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিজ প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে যে সব কোম্পানির পরিচালক ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে পুনর্গঠিত পর্ষদের তালিকা বিএসইসিতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তালিকাভুক্ত ১২০ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) সত্যায়িত শেয়ার ধারণ করা পরিচালকদের নিয়ে পুনর্গঠিত পর্ষদের তালিকার অনুলিপি কমিশনে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু ১০৬টি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে তথ্য জমা দিলেও ১৪ প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ২০ এ ধারা লঙ্ঘনের শামিল।
পরবর্তী সময়ে গত বছরের ২২ জানুয়ারি বিএসইসির ৪৬৫তম নিয়মিত কমিশন সভায় ১৪ কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে আইন লঙ্ঘনকারীদের চূড়ান্ত তালিকা এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এই বিষয়ে বিএসইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমার জানা মতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে ১৪ প্রতিষ্ঠানের ৩৫ পরিচালক। এতে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন ক্রমান্বয়ে চলছে। ইতোমধ্যে কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের শুনানিতে ডাকা হয়েছে। তাদের অভিমতের ভিত্তিতে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘নির্দেশনা অনুসারে আরও ২০ কোম্পানি কমিশনে তথ্য দাখিলে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে বিএসইসির চিঠির জবাব দেয়নি ১৪টি এবং বাকি ছয়টি কোম্পানি দেরিতে চিঠি দিলেও তাতে শেয়ার ধারণের অপারগতার কথা জানানো হয়।’
শেয়ার ধারণে ব্যর্থ পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন- ইসলামী ব্যাংকের শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মমিনুল ইসলাম পাটোয়ারি ও ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটির প্রতিনিধি হাফিজুল ইসলাম মিঞা; ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের ইসমাইল নওয়াব, তাজুল ইসলাম, আসমা নূর, আবদুল হালিম ও নুসতারিন জামিলা; ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের হাবিবুল আলম; ইনটেক অনলাইনের শামসুল আলম; সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদ আজম, এ জাবের মোল্লা, রেজাউল হক, সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল পাটোয়ারি ও সাইদুর রহমান; এক্সিম ব্যাংকের হাবিবউল্লাহ ডন; গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের সৈয়দা নাজমুন নাহার, খুরশিদা আহমেদ, ফরিদ হোসেন ও নার্গিস আকতার; আইএফআইসি ব্যাংকের সৈয়দ আনিসুল হক; বারাকাত উল্লাহ ইলেকট্রো ডায়ানমিকসের আবদুল বারী; এসিআই লিমিটেডের ওয়ালিউর রহমান ভূঁইয়া; ঝিলবাংলা সুগার মিলসের শাহদুল হক বুলবুল ও নুরুল আমিন; মুন্নু সিরামিকের হারুন নাহার রশিদ ও রাশেদ মোমিনুল ইসলাম (বর্তমানে অতিরিক্ত পরিচালক); ফাইন ফুডসের নজরুল ইসলাম ও আঙ্গুর খান এবং প্রাইম টেক্সটাইলের আবুল বাশার, ফাতেমা খাতুন, আবদুল হাফিজ ও আবদুল করিম।
যে ১৪টি কোম্পানি কমিশনের চিঠির জবাব দেয়নি সেগুলো হল, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস, আনলিমা ইয়ার্ন, সিএমসি কামাল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, কাশেম ড্রাইসেলস, রংপুর ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস, সমতা লেদার, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ম্যারিকো বাংলাদেশ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ও মেট্রো স্পিনিং।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডব্লিউএন/এনআই/জানুয়ারি ১৮, ২০১৪)