বার্ন ইউনিটে বৈষম্য
সাধারণ রোগীরা বঞ্চনার শিকার
আহমদুল হাসান আসিক ও সোহেল রানা, দ্য রিপোর্ট : অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পুলিশ সদস্যরা সুচিকিৎসা পেলেও সাধারণ রোগীরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগী ও পুলিশ সদস্যদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসা সেবা নিয়ে বৈষম্যের কারণে সাধারণ রোগীর স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
একাধিক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চিকিৎসা সেবার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা থাকলেও ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না চিকিৎসা। তবে পুলিশ সদস্যদের ক্ষেত্রে এ চিত্র পুরো উল্টো। সাধারণ রোগীরা নানা অভিযোগ দিয়েও কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না, অথচ পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
তারা আরও জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। অনেক রোগী এখানে আর থাকতে চাইছেন না।
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সিএনজি চালক রুবেল মিয়ার স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, আমরা বার বার অভিযোগ দিয়েও সুচিকিৎসা পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে আমার স্বামী চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার স্বামীর কোনো অপারেশন করা হয়নি। তাই এখানে মরার চেয়ে বাড়িতে গিয়েও যদি আমার স্বামী মরে তাহলে দুঃখ থাকবে না।
চিকিৎসা নিয়ে কোনো ধরনের বৈষম্য হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি পুলিশদের চিকিৎসা নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সরকার তাদের সব ধরনের সুবিধা দিচ্ছেন।
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মো: হারুন অর রশীদ বলেন, আমি গত ৯ নভেম্বর অগ্নিদগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছি। এক মাস পেরিয়ে গেলেও আমি সুস্থ হইনি। ঠিকমতো চিকিৎসা পেলে এতোদিনে সুস্থ হয়ে যেতাম। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দেখতে এসে সুচিকিৎসার আশ্বাস দিলেও সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
শাহবাগে বিহঙ্গ পরিবহনে পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ হওয়া গীতা সেন বলেন, চিকিৎসা সেবা নিয়ে বলতে গেলে সংকটের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ওই বাসে যে সব রোগী দগ্ধ হয়েছে তাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন। আমার বার্নের পরিমাণ কম থাকায় বেঁচে গেছি। চিকিৎসা সেবা নিয়ে বলতে গেলে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো চিকিৎসা সেবা আমরা পাইনি।
সাধারণ রোগী ও স্বজনদের এমন অভিযোগ থাকলেও পুলিশ সদস্যদের স্বজনদের নেই কোনো অভিযোগ। পুলিশ কনস্টেবল ইমাম উদ্দিনের চাচাতো ভাই সিরাজুল ইসলাম জানান, তাদের চিকিৎসা নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, আমার ভাই গত ৪ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জের কমলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হন। এরপর থেকেই বার্ন ইউনিটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন। চিকিৎসা সেবা নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। সরকার এবং পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি।
তিনি আরও জানান, এখানে আমাদের কোনো ধরনের খরচ হচ্ছে না। ডাক্তাররা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
আবুল কালাম আজাদ পুলিশের কনস্টেবল। ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন গাইবান্ধা ডিগ্রি কলেজের সামনে পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হন। আজাদের স্ত্রী শাহীনা আফরোজা বলেন, এখানে চিকিৎসা সেবা যথেষ্ট ভালো। আমরা গরীব মানুষ, এতো টাকা দিয়েতো আর চিকিৎসা করাতে পারতাম না। সরকারই সব ব্যবস্থা করছে।
ঢাকা মেডিকেল বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে পুলিশ সদস্য আছে ১১ জন। সবমিলে রোগী মারা গেছে ২৩ জন। পুলিশ সদস্য মারা গেছে ২ জন।
পুলিশ সদস্যদের বিশেষ কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ সংকর পাল বলেন, ভিক্টিমের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এখানে কে পুলিশ কে সাধারণ রোগী তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।
পুলিশ সদস্যদের জন্য আলাদা কোনো ফান্ড আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রত্যেক রোগীর জন্যই আলাদা ফান্ড আছে। রোগীকে রোগী হিসেবেই আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি।
বার্ন ইউনিটের উপদেষ্টা সামন্ত লাল সেন বলেন, কোনো রোগীদের বিশেষ কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। কোনো রোগীকেই আমরা আলাদা চোখে দেখছি না। পুলিশের পক্ষ থেকে সদস্যদের কিছু অর্থ সহায়তা করছে।
(দ্য রিপোর্ট/এএইচএ/এইচএসএম/এনআই/জানুয়ারি ১৮, ২০১৪)