সবজির দাম কমেছে, কমেনি চালের
আল হেলাল শুভ, দ্য রিপোর্ট : গত সপ্তাহ থেকে ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম কমেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম আপাতত কমার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে শীতকালীন সবজির দাম কমেছে। চাল ছাড়া বাড়তি দামের তালিকায় রয়েছে সয়াবিন তেল, প্যাকেটজাত আটা ও গুঁড়োদুধ। এ সব পণ্যের দাম গত ২ সপ্তাহ ধরে বেড়েছে। অন্য নিত্যপণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহল, কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের এই চিত্র।
বিক্রেতারা জানান, অবরোধ ও হরতালের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব থেকে এখনও বের হয়ে আসতে পারেনি চালের দাম। গত সপ্তাহের মত চলতি সপ্তাহেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ফলে ভোগান্তিতে পরেছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার কারণে ডিমের দাম বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তবে বাজারের এখন বাড়তি দাম নেওয়া শুরু হয়নি। রাজধানীর অধিকাংশ বাজারে প্রতি হালি ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা দরে।
কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী সিরাজ এন্ড সন্স স্টোরের মালিক ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, হরতাল-অবরোধ থেকে এখনও মুক্ত হয়নি চালের বাজার। অবরোধের কারণে চাল মিলাররা যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা তারা পুষিয়ে নিতে চায়। তবে টানা অবরোধের পর চলতি সপ্তাহে পরিবহন খরচ কিছুটা কমেছে।
একই কথা বললেন ওই বাজারের শাহজাহান তালুকদার নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, মালিকরা বলছে ধানের দাম বেশি, তাই তারা চালের দাম বাড়িয়েছে। তাই চালের দাম বেড়েছে। চালের এই দাম আপাতত কমার আর কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
বাজারে নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা, মিনিকেট ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ও পারিজাত চাল ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই দাম ছিল গত সপ্তাহেও।
বাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় সব সবজির দাম কমেছে। মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবজির দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা কম। তবে সবচেয়ে বেশি কমেছে আলুর দাম। এক কেজি দেশি আলু ১৬-১৮ টাকায় ও বিদেশি আলু ১২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একই চিত্র মিলেছে হাতিরপুল কাঁচা বাজারেও।
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন বলেন, প্রায় সব সবজির দাম কম। তবে আলু পানির দামে বিক্রি হচ্ছে।
অন্য সবজির মধ্যে প্রতি কেজি টমেটো ২৫-৩০ টাকায়, শিম ২০-২৫ টাকায়, বেগুন ২৫-৩০ টাকায়, শসা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়, গাজর ২০-২৫ টাকায় ও ফুল কপি প্রতি পিছ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে মরিচের দাম।
গত সপ্তাহে প্রতি কেজি টমেটো প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া শিম প্রতি কেজি ৩০ টাকা, ফুল কপি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, আলু ২০ টাকা ও শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও গাজর ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গত কয়েক মাস পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীলতা থাকলেও গত সপ্তাহ থেকে দাম কমেছে। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ বাজার ও মান ভেদে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকা দরে।
বাজারে মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশি মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গরুর মাংস বাজারভেদে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। গত সপ্তাহেও দাম প্রায় একই ছিল বলে জানান মোহাম্মদপুর ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা।
গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ২ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ৫ লিটার বোতলের দাম ৬১০ টাকা কিন্তু আগে ছিল ৬০০ টাকা। তীর ব্র্যান্ডের বোতলজাত ৫ লিটার তেলের দাম ৫৯০ টাকা, আগে ছিল ৫৮০ টাকা। প্যাকেটজাত আটার দাম দুই টাকা বাড়তি। এক কেজি আটার দাম বর্তমানে ৩৮ টাকা, কিন্তু আগে এর দাম ছিল ৩৬ টাকা। এক মাস আগে ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের হাফ কেজি গুঁড়ো দুধের দাম ছিল ৩২৫ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৪৫ টাকায়। এ ছাড়া দেশি ডাল ১১০-১১৫ টাকা ও বিদেশি ডাল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের ক্রেতা আজাদ সরকার বলেন, মাছের দাম বেশ চড়া। চালসহ অনেক জিনিসের দাম বেশি বেশি হওয়ার কারণে বিপাকে পরতে হচ্ছে। তবে সবজির দাম কম হওয়ায় একটু স্বস্তি।
(দ্য রিপোর্ট/এএইচএস/জেএম/আরকে/জানুয়ারি ১৮, ২০১৪)