ক্ষমতায় গিয়েও ক্ষোভে পুড়ছে ১৪ দল
আমানউল্লাহ আমান, দ্য রিপোর্ট : দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় গিয়েও ১৪ দলের মধ্যে ক্ষোভের আগুন যেন নিভছেই না। পারস্পরিক সমঝোতার মধ্যদিয়ে ১৪ দলের শরীকরা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও মূল্যায়নের হিসাব নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, জোটে আওয়ামী লীগসহ অপেক্ষাকৃত বড় দলগুলোর কাছে ছোটরা প্রকৃত মূল্যায়ন পাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একাধিক শীর্ষ নেতা দ্য রিপোর্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জোটের শরীক নেতারা বলেন, জোটগতভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম ও সরকার পরিচালনার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ আমাদের প্রকৃত মূল্যায়ন করছে না। গত মহাজোট সরকারের আমলেও আমাদেরকে মূল্যায়ন করা হয়নি। এবার আওয়ামী লীগের আশ্বাসে আমরা আশায় বুক বেধেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি সেই আশায়ও গুড়ে বালি। এমনকি গত ১১ জানুয়ারি বঙ্গভবনে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
জোট নেতারা আরও জানান, ছোট দলগুলোর মধ্যে সাম্যবাদী দল থেকে মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় একজনকে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও এবার কাউকেই কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নির্বাচনে সংসদীয় আসন দেওয়া তো দূরে থাক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার বিষয়েও আওয়ামী লীগ আমাদের কাছ থেকে কোন প্রকার পরামর্শ গ্রহণ করছে না।
তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকারের ছত্রছায়া ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মহাজোট সরকারের সময় যারা দলকে কিছুটা শক্তিশালী করেছে সেই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীও দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ছোট দল হিসেবে কোন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বও আমরা পাইনি। অথচ বিরোধী দলীয় জোটের আন্দোলন মোকাবেলা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পাশে থেকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছি।
এ দিকে জোটের শরীক দলের নেতাদের অনুরোধেও জোটের বৈঠক স্থগিত করা হয়নি। কোনো কোনো সময় জোটের বৈঠক ডাকা হলেও জোটের শরীক ছোট ছোট দলগুলোকে জানানো হয় না।
এমন একটি ঘটনা ঘটে গত ২৩ ডিসেম্বর। ওইদিন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সঙ্গে ঢাকার পার্শ্ববর্তী ৭ জেলার মতবিনিময় সভা ছিল। ওই বৈঠকটি ছিল বিকেল তিনটায়। বৈঠকের সংবাদ শরীক নেতাদের কাছে পৌছে ওইদিন দুপুর ১২টায়। এদিকে শনিবার সকালে ১৪ দলের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার রাতে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে তা স্থগিত করা হয়।
সূত্র জানায়, গণতন্ত্রী মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণ আজাদী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (রেজাউল) এরা কেউই শপথ গ্রহণের দিন বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ পাননি। একমাত্র ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদ দাওয়াত পেয়েছে। মহাজোট এখন এই ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ নিয়েই চলছে। সরকার গঠন হয়ে গেছে, এই ছোট ছোট দলগুলোই দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকারের কাছ থেকে কখনোই তারা মূল্যায়িত হয়নি বা কখনোই কোনো পোস্ট বা পজিশন পায়নি। এটা নিয়ে ছোট দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে, গত কয়েকদিনে সারা দেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় গ্রেফতারের সংখ্যা একেবারেই কম। ফলে একটি আদর্শিক বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সাম্যবাদী দল একেবারেই হাত গুটিয়ে আছে।
এ বিষয়ে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। শনিবারের বৈঠক স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাসিম সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন। উনি আমাদের মুখপাত্র। আমাদেরকে বলা হয়েছে উনি থাকবেন না তাই বৈঠক হবে না।
এ বিষয় কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম-আহ্বায়ক অসীত বরণ রায় দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা ছোট ছোট দলগুলো সবসময় আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি অসাম্প্রদায়িক ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। আমাদের কোনো মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমাদেরকে কোনো সরকারি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এ জন্য আমরা ক্ষুব্ধ। শনিবারের বৈঠক স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আগেই ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমকে বৈঠক স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলাম। কারণ আমরা কমরেড নির্মল সেন মেলায় থাকবো। তবুও বৈঠক ডাকা হয়েছিল। পরে হয়তোবা ওনার কোন কাজের কারণেই বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, আগে থেকে যেভাবে দায়িত্ব বণ্টন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। ছোট ছোট দলগুলোকে যে দায়িত্ব দেওয়ার কথা তা দেওয়া হয়নি। তবে এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে এখনও ক্ষোভ তৈরি হয়নি। বৈঠক স্থগিত হয়েছিল ১৪ দলের অধিকাংশ নেতা যশোরে নির্মল সেন মেলায় উপস্থিত থাকার কারণে।
তবে আগামী বৈঠকেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/জেএম/জানুয়ারি ১৮, ২০১৪)