আমানউল্লাহ আমান, দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : আগামী রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘটিয়ে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আল্টিমেটামের জবাবে এবং হরতাল ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এই জনসভার আয়োজন করেছে দলটি।

জনসভাকে বিএনপির রাজপথের আন্দোলনের বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তিপ্রদর্শনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে ঢাকা শহরের সব সাংগঠনিক শাখাগুলোকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনসভাকে সফল করতে কেন্দ্র থেকে তৃণমুল পর্যন্ত প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে, দেওয়া হচ্ছে নানা দিক-নির্দেশনা।

এ নিয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ও ঢাকার আশেপাশের দলীয় সংসদ সদস্য ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর আশপাশের জেলা ও উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতাদের সঙ্গে বুধবার সকালে গণভবনে বৈঠক করে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন। এ সভায় ঢাকা মহানগরসহ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দলের সংসদ সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। তাদের এই নৈরাজ্যে আমাদের দুর্বল হলে চলবে না। আমাদের দুর্বল মনে করলে তারা আরও বেশী অরাজকতা সৃষ্টি করবে। তাদের এই সুযোগ দেওয়া যাবে না। তাদের প্রতিহত করতে আমাদেরও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এ সময় তিনি সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় স্মরণকালের সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।

শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করে এসে বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মহানগরের নেতারা। শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী তাদেরকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনাও প্রদান করেন নেতারা। ইতিমধ্যেই প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় জনসভা উপলক্ষ্যে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বৈঠকে নেতাকর্মীদের বলেন, তিনদিন হরতাল করেও খালেদার সাধ মেটেনি। এ কারণে তারা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। তাদের এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে আমাদের বিশাল চপটোঘাত দিতে হবে। তারা একটি থাপ্পর মারলে তাদের দুটি থাপ্পর মারার শক্তি অর্জন করতে হবে।

তিনি বলেন, ৩ তারিখের পরে বিএনপি যাতে সমাবেশের নামে আর কোন হরতাল ও অরাজকতা করার সাহস না পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এই সমাবেশের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করতে হবে। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা নিয়ে খালেদা টান দিয়েছে। এই স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। শুধু চ্যালেঞ্জ নয়, এটা আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যাপার।

কোন অজুহাত চলবে না, সমাবেশে সক্রিয়ভাবে সবাইকে অংশ নিতে হবে। নেতাকর্মীরা সবাই আছে কিনা প্রয়োজনে এর হাজিরা নেওয়া হবে। হেফাজতিরা যদি চট্টগ্রাম থেকে হেটে এসে মতিঝিলে সমাবেশ করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না।

তিনি বলেন, জনসভায় জনস্রোত নামাতে হবে। ঢাকা শহরের দেড় কোটি মানুষের মধ্যে কয়েক লাখ কি আমরা উপস্থিত করতে পারব না? এই জনসভা সফল করার মাধ্যমে বিরোধী দলকে প্রতিহত করতে পারলে আগামী নির্বাচনে আমরাই জয়লাভ করব।

এদিকে এ জনসভা সফল করতে তিনদিনের কর্মসূচি দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারে সকালে মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রস্তুতি সভা। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় নগর নেতা, সাংসদ, উপদেষ্টা. থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের সাথে যৌথ বর্ধিত সভা। শনিবার ঢাকা শহরের প্রতিটি থানায় কর্মীসভা।

জনসভাকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে জোর প্রস্তুতি। বুধবার বিকালে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করতে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসে আওয়ামী লীগ যে জনসভা করবে তা ঐতিহাসিক জনসভায় রূপান্তর হবে।

অন্যদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালি মন্দিরের কোল ঘেষে তৈরী হচ্ছে মঞ্চ। মঞ্চের দুপাশের রয়েছে গণমাধ্যম কর্মী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের বসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। সভামঞ্চের সামনে ৬০/৮০ ফুটের প্যান্ডেল। এছাড়াও মহিলাদের জন্য থাকবে সুব্যবস্থা। থাকবে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ভ্রাম্যমাণ গণশৌচাগার। সভামঞ্চসহ জনসভাস্থল তৈরীতে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে ৫০ জন শ্রমিক। পিয়ারু সরদার এন্ড সন্সের ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক জানান, জনসভার দিন সকালের মধ্যে সকল কাজ শেষ করা হবে।

(দিরিপোর্ট২৪/এ/জেএম/অক্টোবর ৩১, ২০১৩)