লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা : ইলিশের প্রজনন মৌসুম নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছ। জেলারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ১৩ থেকে ২৩ অক্টোবর ইলিশ প্রজননের সঠিক সময় নয়। এ সময় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যসন্ত বাড়ানো উচিৎ ছিল।

তারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারেনি। ফলে নদীতে এখন জাল ফেললেই আটকা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ। জেলার রায়পুর মেঘনা নদীসহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এছড়া, জেলার বিভিন্ন বাজারে রুপালি ইলিশের যেন ছড়াছড়ি। দামও অনেক কম। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই খুশি।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ইলিশ মাছের নিশ্চিত প্রজননের লক্ষ্যে চাঁদপুরের মেঘনার ষাটনল থেকে রামগতি পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকা প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ এলাকায় ১৩ থেকে ২৩ অক্টোবর ১১দিন সরকার ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে আইন জারি করে।

রায়পুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মা ইলিশে ছেয়ে গেছে বাজার। দামও তুলনামূলক কম। আগে যে ইলিশ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এখন তা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জেলেরা জানান, ২৩ অক্টোবর রাত ১২টায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরপরই তারা ইলিশ আহরণে নদীতে জাল ফেলেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের জালে প্রচুর পরিমাণে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়েছে।

জেলেদের অভিযোগ, ১৩ থেকে ২৩ অক্টোবর ইলিশের প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করা হলেও ওই সময় মা ইলিশ তেমন একটা ডিম ছাড়েনি। অক্টোবরের শেষের দিকে শুরু করে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ইলিশের ডিম ছাড়ার সঠিক সময়।

স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ ইলিশের প্রজনন মৌসুম নির্ধারণে জেলেদের সঙ্গে আলাপ না করেই নির্ধারণ করায় ইলিশ রক্ষা অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে বলে জেলেরা মনে করেন।

৪০ বছর ধরে নদীতে ইলিশ ধরছেন রুহুল আমিন ও মফিজ আলম। তারা জানান, 'ছোটবেলা থেকে নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরছি। মাছ ধরাই একমাত্র পেশা। ইলিশ ধরে বিক্রি করে সারাবছর সংসার চালাই। আমরা বুঝতে পারি কখন মা ইলিশ ডিম ছাড়বে। অথচ মৎস্য বিভাগ আমাদের সঙ্গে কখনো আলোচনা না করেই ডিম ছাড়ার প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করে। প্রকৃতপক্ষে এখনো মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় হয়নি। অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ এর সঠিক সময়। সরকার চাইলে আমরা ওই সময় মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকতে পারি। তাহলে নদীতে সারাবছর প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।'

খাসেরহাট নাইয়াপাড়া জেলে সমিতির সভাপতি মো. মোস্তফা বেপারী বলেন, প্রায় ৬০ শতাংশ ইলিশ মাছ নিষেধাজ্ঞার সময় ডিম ছেড়েছে। ৪০ শতাংশ ইলিশ মাছ এখনো ডিম ছাড়েনি। রায়পুরের প্রায় ১০ জেলে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। মঙ্গলবার এসব জেলে নদীতে মাছ ধরতে গেলে তাদের জালে অনেক ডিমওয়ালা ইলিশ ওঠে।

রায়পুর উপজেলা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বাজারে কিছু ডিমওয়ালা ইলিশ দেখা যাচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখা প্রয়োজন। আগামী বছর কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়াতে পারে।

(দিরিপোর্ট২৪/এমএইচ/এমএআর/অক্টোবর ৩১, ২০১৩)