দ্য রির্পোট প্রতিবেদক : ১৮ দলীয় জোটের শরিকদের ছাড়াই সোমবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পূর্বঘোষিত গণসমাবেশ করছে বিএনপি। পুলিশি শর্তের কারণে জোটগতভাবে নয়, এককভাবেই গণসমাবেশ করবে দলটি।

জোটের শরিকদের ছাড়া এককভাবে বিএনপির সমাবেশের বিষয়টি দ্য রির্পোটকে নিশ্চিত করেছেন দলের প্রচার-সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, ‘এটি বিএনপির একক কর্মসূচি। বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হবে।’

জোটের শরিক দল ছাড়া এ সমাবেশের বিএপির প্রস্তুতির বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শরিক দলগুলোর নেতারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার বিএনপির এই গণসমাবেশের অনুমতি দেয় রবিবার সন্ধ্যায়।

জানা গেছে, সমাবেশের অনুমতির ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে মোট ১২টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলোর অন্যতম হচ্ছে- বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামকে সমাবেশে রাখা যাবে না।

এ ব্যাপারে জামায়াতের বেশ কয়েক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

তবে দলীয় সূত্রে জানা যায়, জামায়াত জোটের অন্যতম শরিক হলেও আগে থেকে কোনো কিছু না জানিয়েই বিএনপি এককভাবে সমাবেশের এ সিদ্ধান্তকে ভালো চোখে দেখছে না দীর্ঘদিনের শরিক দলটি। বিএনপির এ বৈরি আচরণে রীতিমত ক্ষুব্ধ জামায়াত নেতারা।

বিএনপির প্রচার-সম্পাদক ফারুক আরও বলেন, গণসমাবেশের এ কর্মসূচি ১৮ দলের ব্যানারে ঘোষণা করা হয়েছে শরিকদের এ দাবির ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জোটের আরেক শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ১৮ দলের ব্যানারে গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আমি শুনেছি এককভাবে এ কর্মসূচি পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আগে থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়নি এটি দুঃখজনক।

ইরান বলেন, বিএনপির সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে রাত সোয়া ৮টার দিকে আমাদের জানানো হবে।

১৮ দলের আরেক শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ১৮ দলের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যাডাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করে শরিকদের বাদ দিয়ে বিএনপি এককভাবে করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা দুঃখজনক। কমপক্ষে ভদ্রতার খাতিরে হলেও আগে থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের জানানো উচিত ছিল।

প্রসঙ্গত, ১৫ জানুয়ারি ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এদিকে বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসহযোগিতা করেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সোমবারের গণসমাবেশ বিএনপির একক কর্মসূচি।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রবিবার রাত ৮টায় বিএনপির পক্ষে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

রিপন বলেন, ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে মাইক ও নিরাপত্তার আবেদন করলেও অনেক পরে এসে অনুমতি দিয়েছে। এ জন্য কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীরা দিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সমাবেশের ঠিক ১৮ ঘণ্টা আগে অনুমতি দিলেও সমাবেশ সফল করতে এই স্বল্প সময়কেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। জনগণ যেভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছে সেভাবে সোমবারের সমাবেশেও উপস্থিত হয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাবে।’ সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিপন বলেন, সোমবারের গণসমাবেশ শুধু বিএনপির কর্মসূচি। সমাবেশে ঢাকাবাসীসহ সারাদেশের জনগণকে দুপুর ২টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দীদের আসার আহ্বান জানায়।

এর আগে সন্ধ্যা ৭ টায় বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশের অনুমতি দেয়।

দলীয় সূত্রের দাবি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ ভোট ‘বর্জন’ করায় তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। দশম সংসদ নির্বাচনের পর এই সমাবেশটি হবে খালেদা জিয়ার প্রথম গণসমাবেশ। এছাড়া ওই দিন সারাদেশে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে গণসমাবেশ ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

(দ্য রির্পোট/টিএস-এমএইচ-কেএ/এসবি/সা/জানুয়ারি ১৯, ২০১৪)