চলছে বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
কাওসার আজম, টঙ্গী ইজতেমা ময়দান থেকে ফিরে : ঢাকার অদূরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আগামী ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মাধ্যমে এবারের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হচ্ছে। এ জন্য চলছে শেষ মুহূর্তের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কাজ। ২৬ জানুয়ারি দুপুরে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা।
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক তাবলীগ জামায়াতের মুরুব্বি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘তাবু টানানো, মঞ্চ তৈরি, মেহমানদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, ওজু, গোসল ও টয়লেটের ব্যবস্থাসহ যাবতীয় প্রস্ততি এখন শেষের দিকে। আমাদের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক বিনামূল্যে কাজ করছেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।’
সরেজমিনে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ইজতেমার মাঠে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। মাঠ জুড়ে তাবু টানানোর (চটের সামিয়ানা) কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলছে মাইক, বাল্ব লাগানো, টয়লেট নির্মাণ ও ওজু-গোসলের জন্য হাউজে পানি সংযোগের কাজ। ইজতেমার মুসল্লীদের সুবিধার্থে পাকা দুইতলা টয়লেটগুলো তিনতলা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরো তিনটি তিনতলাবিশিষ্ট টয়লেট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে মূল মঞ্চ। তিন দিনব্যাপী ইজতেমায় এ মঞ্চ থেকেই দেশ-বিদেশের তাবলীগ জামায়াতের মুরুব্বিরা আম ও খাস বয়ান, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, তালিম, ছয় উছুলের হাকিকতের ওপর আলোচনা করবেন। ২৬ জানুয়ারি দুপুর সোয়া ১২টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় জুড়ে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, অগ্রগতি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে উর্দু ও আরবি ভাষায় আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ব তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষ মুরুব্বি প্রয়াত হযরত মাওলানা এনামুল হাসানের পুত্র মাওলানা মো. যোবায়ের হাসান আখেরী মোনাজাতটি পরিচালনা করবেন। এ ছাড়া চিল্লায় নাম লেখানো ও যৌতুকবিহীন বিয়েও সম্পন্ন করা হবে ইজতেমার মঞ্চ থেকে।
প্রথম পর্বের ইজতেমায় ৩২ জেলার মুসল্লীরা অংশ নেবেন। এ ছাড়া শতাধিক দেশের বিদেশি মুসল্লীসহ ৪০ লাখেরও বেশি মুসল্লী বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন বলে তাবলীগ জামায়াতের মুরুব্বিরা জানিয়েছেন।
জেলাগুলো হল- ঢাকা, গাজীপুর, ফরিদপুর, নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, নাটোর, শেরপুর, দিনাজপুর, রংপুর, হবিগঞ্জ, লালমনিরহাট, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি।
ইজতেমার মুসল্লীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে তুরাগ নদীর পশ্চিম তীরের সঙ্গে পূর্ব তীরের সংযোগ সেতু (ভাসমান পন্টুন) নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এ পন্টুন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে দায়িত্বরত রংপুর-৬৬ পদাতিক ডিভিশনের নবম ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তুরাগের পশ্চিম পাড়ের সঙ্গে পূর্ব পাড়ের মানুষের অবাধ চলাচলের জন্য ৮টি বিশেষ পন্টুন নির্মাণ করা হচ্ছে।’
এদিকে ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লীদের যাতায়াতের জন্য বিআরটিসির পক্ষ থেকে ৩০০ বাস বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২১ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পযন্ত প্রথম ধাপে এবং পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় ধাপে ১৪দিন বিআরটিসির বাসগুলো ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের পরিবহন করবে। বিআরটিসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্বিম পাশে বিদেশি মেহমানদের থাকার জন্য লোহার পাইপ ও টিন দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় তাবু নির্মাণ করা হয়েছে। শতাধিক দেশের মুসল্লীরা এবার ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান ও কাকরাইল মারকাস মসজিদে কয়েক হাজার বিদেশি মুসল্লী এসেছেন জানিয়ে রবিউল ইসলাম নামে এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত বছরের চেয়ে এবার বিদেশি মেহমান কম আসছেন।’
ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ইজতেমা মাঠ ও আশেপাশের এলাকা জুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মাঠের প্রবেশদ্বারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে লাগানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। পুলিশ ও র্যাব আলাদাভাবে এ সব সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছে। এ ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। এ সব টাওয়ার থেকে ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকা পযবেক্ষণ করা হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমায় আগতদের জান-মাল রক্ষায় ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পোশাকি ও সাদা পোশাকে কঠোর নজরদারি করবে। ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকায় ১২ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য মোতায়েন থাকবে।’
ইজতেমার নিরাপত্তার ব্যাপারে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেছেন, এবারের ওয়াচিং টাওয়ারগুলো হবে অত্যন্ত শক্তিশালী। ইজতেমা চলাকালে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল জোরদার থাকবে। গত ১৭ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের অফিসের সামনে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি সভায় তিনি এ কথা জানান।
তাবলীগ জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, ২৬ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে বিশ্ব্ ইজতেমার প্রথম পর্বের কাযক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে। চারদিন বিরতি দিয়ে আগামী ৩১ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। ২ ফেব্রুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের বিশ্ব ইজতেমার কাযক্রম।
(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এসকে/জানুয়ারি ১৯, ২০১৪)