দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : প্রায় ২০ দিন পেরিয়ে গেছে; এখনো ফিরে আসার একটুও লক্ষণ নেই। অথচ গতিই ছিল যার জীবনের মূলমন্ত্র, সেই গতিই এখন থেমে গেছে। রেডস্টার মাইকেল শুমেখারের জীবনের বাকি দিনগুলোয় হয়তো অপেক্ষা করছে নিরনন্ত স্তব্ধতা! হয়তো তাকে আর দেখা যাবে না বিশ্বের দ্রুততম গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলের পিছনে। গতিময় ছন্দে ৭ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শুমেখারকে আর দেখবে না পৃথিবী, হয়তো আচ্ছন্নতা আর কাটবে না তার৷ শরীর থেকেও মৃত্যু শুমেখারের। সর্বশেষ খবর, অচেতন শুমেখার আমৃত্যু এভাবেই কোমায় শুয়ে কাটিয়ে দেবেন! ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে, ভেজিটেটিভ স্টেট৷ অলৌকিক কোনো ঘটনা না ঘটলে শুমেখারের গতিময় জীবনে ফিরে আসার সুযোগ এক্কেবারেই নেই।

বাংলাদেশে ফর্মুলা ওয়ানের মাইকেল শুমেখারকে নিয়ে খুব মাতামাতি না থাকলেও ক্রীড়াসংশ্লিষ্টদের কাছে কিংবদন্তি তূল্য। দৈনিক বিল্ড একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে শুমেখারের যা অবস্থা, তাতে তার জেগে ওঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে৷ শুধু বিল্ড নয়, জার্মানির জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা ফোকাস লিখেছে, 'শুমেখারকে হয়তো সারাজীবনই কোমায় থাকতে হবে৷' এক কথায় শুমেখারের ভবিষ্যত কী হতে পারে, তা নিয়ে জার্মানির সংবাদমাধ্যমে প্রবল জল্পনা৷ প্রায় দুর্ঘটনার পরও সেই শ্যুমিকে ইনডিউসড কোমা থেকে বের করার কোনও লক্ষণ নেই৷ যা নিয়ে শোকস্তব্ধ তার ঘনিষ্ঠ পরিজনরা এবং বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ভক্ত৷ সবচেয়ে বড় কথা, চিকিত্‍সার দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল টিম বা তার ম্যানেজমেন্ট টিমের সদস্যরা অদ্ভূতভাবে নীরব৷ কেউ কোনও ভাবেই মুখ খুলছেন না৷ সাধারণভাবে রোগীদের এক থেকে দু'সপ্তাহের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসে৷ কিন্তু ৭ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন চালককে নিয়ে ওল্ডেনবার্গ ইউনিভার্সিটি ক্লিনিক ফর নিউরোসার্জারির নিউরোসার্জেন অ্যান্দ্রেস জিগার ফোকাস পত্রিকায় বলেছেন, ‘শুমেখারের ব্যাপারটায় নিশ্চয়ই আরও কোনও জটিলতা আছে৷ আজীবন কোমায় চলে যাওয়ারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।’


একটি গবেষণায় লন্ডনের সার্জেনরা বলছেন, তা আরও মারাত্মক৷ রিডিউসড কোমা থেকে বেরিয়ে এলেও শুমেখারের জন্য স্বাভাবিক জীবনে ফেরা প্রায় অসম্ভব৷ লন্ডনের প্রখ্যাত কনসালন্ট্যান্ট নিউরোলজিস্ট রিচার্ড গ্রিনউড স্পষ্ট করে বলেছেন, 'যদি শুমেখার বেঁচেও যান, তবে তিনি আর যাই হন না কেন, শুমেখার থাকবেন না৷ বনে যাবেন স্থবির এক প্রাণী।’

মস্তিষ্ক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বরফে স্কি করতে গিয়ে আঘাত পেয়ে ৪৪ বছরের চালকের শরীরের কোনও কাজই ঠিকঠাক হচ্ছে না৷ একে বলা যায় ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি (টিবিআই)। এ রকম হলে দীর্ঘমেয়াদি মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা যেতে পারে৷ কোমা থেকে বেরিয়ে মস্তিষ্ক বিকৃতি হলে শুমেখার প্রথমত, সারাক্ষণই অবসাদে ভুগবেন৷ দ্বিতীয়ত, স্বভাব-চরিত্র বদলে যাবে৷ তৃতীয়ত অপরাধপ্রবণ হয়ে যেতে পারেন৷


মাইকেল শুমেখারের ভবিষ্যত্‍ যাই হোক না কেন, তার জন্য প্রার্থনার অন্ত নেই৷ কিন্তু কোথাও কোনও আশার আলো বাতিঘর জ্বলছে না। দেখাতে পারছেন না ডাক্তাররা কোনো পথ। সব মিলিয়ে ধারণার চেয়েও বাজে সময় পার করছেন বিশ্বসেরা চালক।

(দ্য রিপোর্ট/এএস/জানুয়ারি ১৯, ২০১৪)