দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবারের পূর্বঘোষিত ১৮ দলীয় জোটের গণসমাবেশ বিএনপি এককভাবে করবে, তা জানা নেই জোটভুক্ত অন্য দলগুলোর নেতাদের। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জামায়াতসহ ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা জানতেন সমাবেশ জোটগতভাবেই হবে।

রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৯ মিনিটে সংবাদমাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ দলের গণসমাবেশ সফলের আহ্বান জানান জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণসমাবেশে যোগ দিতে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশও দেন।

এদিকে সমাবেশে অনুমতি পাওয়ার পর রবিবার রাত ৮টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবারের গণসমাবেশ বিএনপি এককভাবে পালন করবে বলে জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অসহযোগিতা করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সোমবারের গণসমাবেশ বিএনপির একক কর্মসূচি।’

জোটের শরিকদের ছাড়া এককভাবে বিএনপির সমাবেশের বিষয়টি দ্য রির্পোটকে নিশ্চিত করেছেন দলের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুকও। তিনি বলেন, ‘এটি বিএনপির একক কর্মসূচি। বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হবে।’

গণসমাবেশের কর্মসূচিকে প্রথমে ১৮ দলের কর্মসূচি বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা বিএনপির একক কর্মসূচি বলা হচ্ছে কেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’

এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে ১৮ দলীয় জোটের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বিএনপি এককভাবে পালন করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ জোটের নেতারা। এর মধ্যে অনেকেই আবার জানেন না শরিকদের বাদ দিয়ে এককভাবে সমাবেশ করছে বিএনপি। তাই তারা সমাবেশ সফল করতে নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জামায়াতের একাধিক নেতার প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, জামায়াত জোটের অন্যতম শরিক হলেও আগে থেকে কোনো কিছু না জানিয়েই বিএনপি এককভাবে সমাবেশের এ সিদ্ধান্তকে ভালো চোখে দেখছে না। এতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ দলটির নেতাকর্মীরা।

১৮ দলের শরিক জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৮ দলের বৈঠকে এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শরিক দল হিসেবে ওই বৈঠকে আমিও উপস্থিত ছিলাম।’

রবিবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির একক কর্মসূচির দাবি প্রসঙ্গে প্রধান বলেন, ‘এটি ১৮ দলের কর্মসূচি। তাই এ কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কেউ কথা বলেনি।’

১৮ দলের আরেক শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহীনুর পাশা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দীর কালকের (সোমবার) গণসমাবেশ ১৮ দলেরই। এটি তো জোটগতভাবে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে আমরা যোগ দেব।’

সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি এই কর্মসূচি এককভাবে পালন করার কথা বলেছে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে কিছু জানা নেই। আমরা তো ঢাকাসহ সারাদেশে গণসমাবেশ সফলের জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি।’

জোটের আরেক শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ১৮ দলের ব্যানারে গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আমি শুনেছি এককভাবে এ কর্মসূচি পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আগে থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়নি, এটি দুঃখজনক।’

বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ’১৮ দলের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যাডাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে শরিকদের বাদ দিয়ে বিএনপি এককভাবে করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা দুঃখজনক। কমপক্ষে ভদ্রতার খাতিরে হলেও আগে থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের জানানো উচিত ছিল।’

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জানুয়ারি ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবারের বিএনপির এই গণসমাবেশের অনুমতি দেয় রবিবার সন্ধ্যায়।

জানা গেছে, সমাবেশের অনুমতির ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে মোট ১২টি শর্ত দেয়া হয়েছে। শর্তগুলোর অন্যতম হচ্ছে- বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জায়ায়াতে ইসলামকে সমাবেশে রাখা যাবে না।

(দ্য রির্পোট/কেএ-এমএইচ/জেএম/শাহ/জানুয়ারি ২০, ২০১৪)