জাপার মহিলা এমপি হতে লাগছে কোটি টাকা!
যোগ্যতা ও শ্রম নয়, বরং যারা কোটি টাকা দিতে পারবেন তারাই হবেন জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টির এমপি- এমনটাই দাবি করেছেন জাতীয় মহিলা পার্টির ঢাকা মহানগর ও কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেত্রী।
মহিলা পার্টির একাধিক সূত্রের দাবি, ‘এ টাকা নিচ্ছেন সরাসরি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও সংসদীয় দলের নেতা রওশন এরশাদ।’
জাতীয় পার্টি দশম জাতীয় সংসদে ৩৪টি আসন পেয়েছে। আনুপাতিক হিসেবে সংসদের বিরোধী এ দলটি ৭টি সংরক্ষিত নারী আসন পাচ্ছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে রবিবার পর্যন্ত ৯৫টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছেন জাপা চেয়ারম্যান। সোমবার সকাল থেকে বনানীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র গ্রহণকারীদের সাক্ষাৎকার নেবেন এরশাদ।
রবিবার সন্ধ্যায় জাপার মহানগরের এক নেত্রী এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানান, একটি মাধ্যমে তিনি এরশাদ ও রওশন এরশাদকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছেন। এর বেশি তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।
মহানগরের ওই নেত্রী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে পার্টি করি। আগে মহিলা পার্টিতে লোকই পাওয়া যেত না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় মহিলা পার্টি প্রাণ ফিরে পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘টাকা লাগলে দেব। কিন্তু পার্টি করার পরও যে আমাদের টাকা দিতে হচ্ছে এর চেয়ে দুঃখের আর কী আছে। অনেক শিল্পপতির বউরা তো কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে। তাদের অলস টাকা আছে। আমরা তো আর এত টাকা দিতে পারব না।’
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এক নারী আইনজীবী সদস্য দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমাকে এরশাদ সাহেবের একজন কর্মকর্তা এমপি হতে ৩ কোটি টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন। আমি বলেছি, যদি টাকাই দিতে হয় তাহলে পার্টি করি কেন।’
তবে দলটির সংসদীয় দলের নেতা রওশন এরশাদ ও দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বন্দ্বের কারণে ৭টি আসন ভাগাভাগি হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এক্ষেত্রে ৩ বা ৪টি পাবেন এরশাদ। বাকিগুলো রওশন এরশাদ।
সূত্রের দাবি, এরশাদ তার ভাগের আসনগুলো ছোটবোন মেরিনা রহমান, জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, মাহজাবিন মোর্শেদ ও অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার স্ত্রীকে দিতে চাচ্ছেন। চট্টগ্রাম মহানগরের এক সময়ের মেয়র ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর নিকটাত্মীয়, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক নেতা মোর্শেদ ইব্রাহিমের স্ত্রী মাহজাবিন মোর্শেদ। অন্যদিকে রেজাউল ইসলাম দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও রওশন এরশাদের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারেননি।
জাপা সূত্রের দাবি, এরশাদ ও রওশনের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হবে এমন খবরে অনেকে রওশন এরশাদের কাছেও টাকা নিয়ে ধরনা দিচ্ছেন। রওশনের কাছে টাকা নিয়ে যাওয়া সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘উনি বলেছেন, দেখবেন। টাকার বিষয়টি আমিও বলেছি। উনি (রওশন) বলেছেন, দেখি কী করা যায়। সময় হলেই বলব।’
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই-হাসনা চৌধুরী লিলি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এমনটি হওয়া উচিত না।’
সংরক্ষিত মহিলা আসনে টাকা-পয়সার লেনদেনের বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নাজমা আকতার বলেন, ‘আমার মনে হয় না টাকা পয়সা দিয়ে কিছু হবে। শোনা যাচ্ছে এবার ত্যাগী নেত্রীদের মূল্যায়ন করা হবে।’
জাতীয় মহিলা পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদিকা ডা. সেলিমা খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শুনেছি অনেকে টাকার ব্যাগ নিয়ে অনেক জায়গায় যাচ্ছেন। অনেক শিল্পপতি ও কালো টাকার মালিকদের স্ত্রীরাও মনোনয়নপত্র কিনেছেন। সে দিন বনানী থেকে কয়েকজন মহিলা মনোনয়নপত্র নিয়ে গেলেন, যাদের আমি জীবনেও দেখিনি।’
(দ্য রিপোর্ট/এসএ/জেএম/শাহ/জানুয়ারি ২০, ২০১৪)