বিএনপি কর্মীদের মধ্যে উজ্জীবিত ভাব
দশম জাতীয় নির্বাচনের পর সোমবার অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের সমাবেশে উপস্থিতি কর্মীদের চাঙ্গা করতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
এর আগে গত বছরের ২৫ অক্টোবর বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গত ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি নিয়ে কর্মীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কারণে তা সফল হয়নি বলে কর্মীদের অভিযোগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবারের সমাবেশকে ঘিরে কর্মীরা নতুন করে আশার আলো দেখছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন একাধিক নেতাকর্মী। সমাবেশ শেষে ফেরার পথে প্রত্যাশার ছবি ফুটে উঠতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের চোখে মুখে।
সমাবেশে অংশ নিতে আসা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, সরকারের বিরূপ আচরণ, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দেখামাত্র গুলি, দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করাসহ নানান দমন পীড়নে আন্দোলন তুঙ্গে অবস্থা থেকে হঠাৎ করেই ভেঙ্গে পড়েছিল বিএনপি। বহুল আলোচিত ২৯ ডিসেম্বরের মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে সফল না হতে পারায় দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনোবল হারিয়ে ফেলেন। এছাড়া ৫ জানুয়ারি সরকারের ‘একতরফা’ নির্বাচনও নেতাকর্মীদের হতদ্যোম করে দিয়েছিল।
নেতাকর্মীরা জানান, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার বিকেলে বিএনপি আয়োজিত ৫ জানুয়ারি প্রহসনের একতরফা নির্বাচন বর্জন করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো উপলক্ষে একটি সফল গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠছেন।
সমাবেশ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণই প্রমাণ করে যে, হতাশ ও বিধ্বস্ত কর্মীরা আন্দোলনে ফেরার চেষ্টা করছে। তারা সরকারবিরোধী স্লোগানে স্লোগানে মাতিয়ে তোলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
সাতক্ষীরায় অভিযানের নিন্দা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, সাতক্ষীরার মতো ছোট জায়গায় যৌথবাহিনী যেভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে, মা-বোনদের হত্যা করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় অভিযানে আদৌ যৌথবাহিনী ছিল কি না, তা সঠিক করে কেউ বলতে পারে না, মানুষের মনে অনেক সন্দেহ।
সাতক্ষীরা অভিযান নিয়ে খালেদা বলেন, `সরকারের কাজ-কর্ম দেখে মনে হয় না দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অটুট আছে।'
আরও বলেন, `ইনকিলাবে যে সংবাদটি প্রকাশ হয়েছে, তার আগে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বিভিন্ন অনলাইন, ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে।’
সমাবেশে ৫ জানুয়ারির ভোটের চিত্র তুলে ধরতে ইনকিলাবের একটি কপিও দেখান বিএনপি চেয়ারপারসন। এভাবে আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরানোর জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করছে বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
এ ছাড়া আগামী দিনে বিএনপি সরকারে গেলে সব কর্মকাণ্ডের বিচারসহ হামলা, মামলা, জঙ্গিবাদ দমন, যুব সমাজ উন্নয়ন, দুর্নীতি মুক্ত সমাজ, গ্রামীণ ব্যাংককে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া, যোগ্যব্যক্তিদের যোগ্য স্থান দেওয়ার কথা হবে -নেত্রীর কাছ থেকে এমন বক্তব্য শুনে উজ্জীবিত হন নেতাকর্মীরা।
টাঈাইল জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহাদ ইকবাল দ্য রিপোর্টকে বলেন,‘ আজকের এই সমাবেশ বিএনপির খুব প্রয়োজন ছিল। এ বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে সারাদেশের লাখ লাখ নেতাকর্মীর ভেঙ্গে পড়া মনোবল আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন এ স্বৈরাচার সরকারের অগতান্ত্রিক বাধার কারণে বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারছিল না। আজকের এ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে অবৈধ সরকারকে তারা চায় না। আজকের পর কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা বা কর্মসূচি দেবে তা তৃণমূল নেতাকর্মীরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। ’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান সোহাগ দ্য রিপোরটকে বলেন, সরকারের দমন পীড়নের কারণে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছিল। আজকে সমাবেশের মাধ্যমে আবারো শক্তি ফিরে পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘মামলা হামলা করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। অতীতেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিটি আন্দোলন সফল করেছে। আগামীতেও যে কোনো আন্দোলন সফল করতে ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।'
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য এম এ মান্নান দ্য রিপোর্টকে বলেন, সত্যি কথা বলতে কী এই সরকারের একতরফা নির্বাচনের পর আমাদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল। ম্যাডামসহ সিনিয়র নেতাদের সরাসরি কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় আমার মতো হাজার হাজার নেতাকর্মী হতাশ হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, আজকের এ সমাবেশে ম্যাডামের বক্তব্য শোনার পর আমার মধ্যে আর কোনো হতাশা নেই। এখন থেকে যে কোনো কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সরকার পতন নিশ্চিত করব।
(দ্য রিপোর্ট/ এমএইচ/এইচএসএম/এনআই/ জানুয়ারি ২০, ২০১৪)