জাতীয় নাট্যশালায় শুক্রবার ‘রুদ্র রবি ও জালিয়ানওয়ালাবাগ’
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভাগের উদ্যোগে নাট্যকার মনজুরে মওলা রচিত, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান নির্দেশিত ‘রুদ্র রবি ও জালিয়ানওয়ালাবাগ’ নাটকটির ১৩তম মঞ্চায়ন একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন আতাউর রহমান, আমিনুর রহমান মুকুল, ফকরুজ্জামান চৌধুরী, শামীম সাগর, এসএম সালাউদ্দিন, এরশাদ হাসান, রিজভী, পূজা, জয়িতা, শীলা, পিয়া, বিউটি, রাজা, সিক্ত, মিজান, মোতালেব, রাশেদ ও শিশুশিল্পী টইটই।
নাটকের কাহিনী সংক্ষেপ : ১৯১৯-এর তেরোই এপ্রিল। পাঞ্জাবে ওই দিনটি ছিলো বৈশাখি দিন। অমৃতসর শহরের ছোট একটি মাঠ। নাম জালিয়ানওয়ালাবাগ। চারদিক দেয়াল দিয়ে ঘেরা। দেয়ালের মধ্যে দু-চারটি ছোটখাটো দরোজা থাকলেও ঢোকার ও বেরুনোর বড় ও প্রধান দরোজা একটিই। ওইদিন ওই মাঠে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। কেউ গ্রাম থেকে এসেছিলেন বৈশাখ শুরুর উৎসব উপলক্ষে; কেউ এসেছিলেন ব্রিটিশদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ডাকা জনসভায় যোগ দিতে। এর আগে রাউলাট আইন জারি করা হয়ে গেছে। মানুষের ন্যূনতম অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দিলেন, ছয়ই এপ্রিল হরতাল আহবান করলেন। মানুষ বিপুলভাবে সাড়া দিলো। এর তিন দিন পর, নয়ই এপ্রিল, ব্রিটিশ সরকার দুই স্থানীয় নেতাকে অমৃতসর থেকে বের করে দিলো। একই সময় খবর এলো, মহাত্মা গান্ধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রস্তাবক জননেতা সাইফুদ্দিন কিছলু এবং সত্যপাল গ্রেফতার হলেন। প্রতিবাদে আবারও হরতাল ডাকা হলো। জনতা মিছিল করে পথে-পথে এগিয়ে চললো। তাদের উপর গুলি ছোড়া হলো। মানুষ ক্ষেপে গিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করলো। তাদের হাতে পাঁচ ইউরোপীয়র মৃত্যু হলো, এক বিদেশিনী ডাক্তার রাস্তায় লাঞ্ছিত হলেন। জনতার ওপর ছোড়া গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ার গুরখা রেজিমেন্টের ৬৫ জন ও বালুচ রেজিমেন্টের ২৫ জন সৈন্য নিয়ে তেরোই এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগের সমাবেশে, আগে থেকে সতর্ক করে না দিয়ে, নিরস্ত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালালেন। দশ মিনিটে ষোল শ পঞ্চাশ রাউন্ড গুলি ছোড়া হলো। আরও গুলি ছোড়া গেলো না, যেহেতু গুলি ফুরিয়ে গিয়েছিল। নিহত হলেন বহু মানুষ, সম্ভবত এক হাজার, কিংবা, তারও বেশি, আহতও হলেন অনেকে।
ভারতবর্ষের বাংলা ও পাঞ্জাব প্রদেশের জনগণ বরাবরই বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। দু’ই প্রদেশের জনগণের মধ্যে একটা আত্মিক সম্পর্ক ছিল। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২২ মে, ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে পাঞ্জাব হত্যাযজ্ঞের খবর পেলেন। তিনি কলকাতায় একটি প্রতিবাদ সভার অয়োজন করলেন এবং এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে চরম ধিক্কার ও ঘৃণাবোধ থেকে তিনি বৃটিশ সরকার প্রদত্ত নাইটহুড (স্যার টাইটেল) উপাধি ত্যাগ করলেন। ভাইসরয় লর্ড চ্যামসফোর্ডকে লেখা চিঠিতে তিনি তাঁর নাইটহুড প্রত্যাখ্যান করলেন, যা কালের যাত্রায় প্রতিবাদ জানাবার এক ঐতিহাসিক দলিল হয়ে আছে।
(এমএইচ/অক্টোবর ৩১, ২০১৩)