শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে দেশ
কৃষির পরিবর্তে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে দেশ। জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) ক্রমেই শিল্প খাতের অবদান বাড়ছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সেবা খাত। আর প্রথম অবস্থানে থাকা কৃষি খাতের অবদান এখন তৃতীয় পর্যায়ে। এ পরিস্থিতিকে উৎসাহব্যাঞ্জক হিসেবে দেখছে পরিকল্পনা কমিশন। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সামষ্টিক অর্থনীতির চালচিত্রের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, বর্তমানে দেশের অর্থনীতি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে সমৃদ্ধ, বিস্তৃত, স্থিতিশীল এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট মুক্ত। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো এবং অতীতের সমস্ত অর্জনকেই ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ধীরগতিতে দৃঢ় ও স্থিতিশীল কৃষিপ্রধান অর্থনীতি থেকে একটি শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশে পরিণত হচ্ছে, যা মধ্য আয়ের অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হওয়ার অন্যতম যোগসূত্র।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৪ বছরে কৃষি খাতে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল উৎসাহব্যাঞ্জক। আলোচ্য সময়ে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত ৪ বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশের চেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ধীরগতিতে কৃষিপ্রধান অর্থনীতি থেকে একটি শিল্পনির্ভর অর্থনীতির দেশে পরিণত হচ্ছে।
এ ছাড়া সেবা খাতে দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ, যা ২০১২-১৩ অর্থবছরে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে।
জিইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং তা আরও কমে ২০১২-১৩ অর্থবছরে হয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ২০০৫-০৬ অর্থবছর, ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে হয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ২০০৫-০৬ অর্থবছর, ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে হয়েছে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ৬ দশমিক ২ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল প্রায় ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর সময়কালে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ক্রমান্বয়ে কমেছে। এর ফলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে এসে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে, যে কারণে অর্থনীতিতে তিনটি বৃহৎ খাতের মধ্যে কৃষির অবদান এখন তৃতীয়।
এ সময়কালে শিল্প খাত ক্রমবর্ধনশীল অবদান রেখেছে এবং প্রবৃদ্ধি ছিল তুলনামূলক বেশি। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ২৯ শতাংশ। সেখান থেকে ৩ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩২ শতাংশ।
জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান কয়েক বছর ধরে ৪৯ শতাংশের আশপাশেই স্থিতিশীল রয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/ডব্লিউএন/এইচএসএম/শাহ/সা/জানুয়ারি ২১, ২০১৪)