উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতা রোধে পাঁচ মন্ত্রণালয়কে ইসি’র চিঠি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা রোধে কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের দিন কেউ যাতে কোনো ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সকাল ১১টায় ইসির সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে বসছে ইসি। পাশপাশি এ বৈঠকের কার্যপত্রও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্বাচনের নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হবে। এর পরই রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে আরেক দফা আইনশৃঙ্খলা বৈঠক করবে ইসি। তবে এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কিনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত ও গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেরভিত্তিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচনে সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব), পুলিশ, আনসার ভিডিপি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান ও কোস্টগার্ড। এ সব বাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচনের দুই দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় টহল দেবে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সশস্ত্র বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবির মহাপরিচালক, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, এনএসআই, এসবি, ডিজিএফআই-এর প্রধানদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
এ বৈঠকেই এ সব ফোর্স মোতায়েন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। কোথায় কী পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাগবে তাও নির্ধারিত হবে এ বৈঠকে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণের আগে পরে মোট ৫ দিনের জন্য মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে মোতায়েন করা হবে অতিরিক্ত পুলিশ, অঙ্গীভূত আনসার ও গ্রাম পুলিশ। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২১ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৫ জন আইনশৃঙ্খলার সদস্য মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়াও উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে ও বিশেষ এলাকাসমূহে (পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওড়) সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশ, অঙ্গীভূত আনসার ও চৌকিদার-দফাদারসহ ২৫ জন ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।
এ ছাড়া সীমান্তবর্তী উপজেলায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা ৫ দিন। র্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান সদস্যরাও ৭ দিন মাঠে থাকবে।
রবিবার ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপের ১০২টি উপজেলায় ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারি। যাচাই-বাছাই ২৭ জানুয়ারি ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ রাখা হয়েছে ৩ ফেব্রুয়ারি।
দ্বিতীয় ধাপের তফসিল বৃহস্পতিবার
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ তফসিল দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যে সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ওই সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। নতুন কোনো ভোটকেন্দ্র বাড়ানো হবে না। ভোটার তালিকাও কোনো রকম হেরফের হবে না বলেও জানান তিনি।
পাঁচ মন্ত্রণালয়কে ইসি’র চিঠি
ঋণখেলাপিদের তথ্য সরবরাহ ও উন্নয়ন বরাদ্দ বন্ধে এলজিআরডি, রদবদল ও লোকবল বিষয়ে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ মঙ্গলবার পাঁচ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি।
নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঋণখেলাপি কোনো প্রার্থী যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে জন্য আগে থেকেই সর্তকতা অবলম্বন করছে কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় নতুন কোনো উন্নয়ন বরাদ্দ না দিতে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে (এলজিইডি), আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সার্বিক বিষয় প্রস্তুত রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে, প্রশাসনে কোনো ধরনের রদবদল না করতে ও নির্বাচন পরিচালনায় প্রয়োজনীয় লোকবল চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) ও সংশ্লিষ্ট আর্থিক ব্যাংক এবং প্রতিষ্ঠান হতে রিটার্নিং অফিসারের কাছে ঋণখেলাপির তালিকা সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তালিকা সরবারহের পর সে অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার একজন প্রার্থীর ঋণখেলাপীর তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ ও সংশ্লিষ্ট অন্য আইনে উল্লিখিত ঋণখেলাপি সংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। তা ছাড়া এর মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বিকেল ৫টার পর সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের নাম, পিতা/মাতা/স্বামীর নাম ও প্রয়োজনীয় অন্য তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্ব-উদ্যোগে সংগ্রহ করার নির্দশনা প্রয়োজন এবং তদানুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীন যে সব প্রকল্প যেমন- টেস্ট রিলিপ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা), ওএমএস, ভিজিডি ও ভিজিএফ নতুন করে ছাড় ও ইস্যু করা যাবে না। তবে নির্বাচন পূর্ব সময়ের আগে নেওয়া ত্রাণ প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাবে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএস/এসবি/এইচএসএম/সা/জানুয়ারি ২১, ২০১৪)