বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার বন্ধের আহ্বান
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সরকারকে ‘অতি দ্রুত’ বিনা কারণে প্রধান বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সংস্থাটির প্রকাশিত মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং এর জোট ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিশাল জয় পেলেও বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের আগে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং এর মিত্ররা যারা নির্বাচন বর্জন করে তাদের এক ডজন নেতা ও শত শত কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বাসভবন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রাখে। এমনকি তাকে বাসভবনে অন্তরীণও করে রাখা হয়। খালেদা জিয়ার বাসভবনে কাউকে প্রবেশ করতে বা বাসভবন থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। সে সময় বিরোধী দলের অনেক নেতাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়।
বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সংস্থাটি যে বিশদ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে ‘বাংলাদেশ’ প্রসঙ্গে এ সব মন্তব্য করা হয়।
প্রতিবেদনে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘পেছনের দিকে মুখ থুবড়ে পড়েছে’ বলেও মন্তব্য করা হয়।
বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর দমন নীতির পথ বেছে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে যারাই সরকারের কাজে সমালোচনা করছে, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধেও প্রচণ্ড হিংসাত্মক ও বেআইনী পদক্ষেপ নিয়েছে।
‘হেফাজতে ইসলামের সমর্থক’ ও ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা’ সরকারের এ রকম পদক্ষেপের শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছে সংস্থাটি। ‘অধিকার’ নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তা আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ, নাস্তিক বলে ‘কথিত’ ব্লগারদের গ্রেফতার এবং সংবাদপত্রের একজন সম্পাদককে গ্রেফতারের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঘিরে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়ার দাবিতে ফেব্রুয়ারিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেটি ছিল শান্তিপূর্ণ। বাংলাদেশ জুড়ে হাজার হাজার মানুষ ওই বিক্ষোভে অংশ নেয়। কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর পরিস্থিতি হিংসাত্মক হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা অনেক মৃত্যুর জন্য দায়ী উল্লেখ করে বলা হয়, তবে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীও অনেক সময় নির্বিচার গুলি চালিয়েছে। যার শিকার হয়েছেন বিক্ষোভাকারী ও নিরীহ পথচারীরা।
ওই সময় সরকার তার সমালোচকদের বিরুদ্ধেও দমন-পীড়ন শুরু করে। বহু ব্লগার-লেখক যারা ইসলামী মৌলবাদীদের তোষণ করার জন্য সরকারের সমালোচনা করেছিল তাদেরও আটক করা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/সাআ/এমএআর/এনআই/জানুয়ারি ২১, ২০১৪)