সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি বলেন, ‘খুব বেশি আত্মতৃপ্তির নির্বাচন হয়নি। ১৫৩টি আসনে ভোটগ্রহণ না হওয়ায় গর্ব করার মতো নির্বাচন হয়েছে তা বলা যাবে না। তবে এর দায় প্রধানত তৎকালীন বিরোধী দলের। কারণ তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো করেইনি, উল্টো নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে।’

ক্যান্টনমেন্টের বাসায় দ্য রিপোর্টকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ সব কথা বলেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সমালোচনার বিষয়ে ফারুক খান বলেন, ‘বিদেশীরা বাংলাদেশে ভোট পর্যবেক্ষণ করতে আসেন। সার্টিফিকেট দিতে আসেন না। তারা দেখতে আসেন ৯ কোটি ভোটারের এত বিশাল কর্মযজ্ঞ কীভাবে পালিত হয়।’

ফারুক খান বলেন, ‘পৃথিবীর হাতেগোনা ৩-৪ টি দেশে ৯ কোটি ভোটার ভোট দেয়। তার মধ্যে বাংলদেশ একটি। এ কারণে অনেক দেশের পর্যবেক্ষক আসেন।’

মন্ত্রিসভা থেকে বাদপড়া প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘সব মন্ত্রিসভায় থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এর আগে আমরা সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। এবার প্রধানমন্ত্রী তার টিমে যাকে যেভাবে দরকার সেভাবে নিয়েছেন। আমাদের হয়তো অন্য কোনো দায়িত্ব দেবেন। শুধু মন্ত্রিসভা নয়, এর বাইরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।’

আলাপকালে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী তার সময়ের উন্নতির ফিরিস্তির কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘গত সরকারের পাঁচ বছরে আমি দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছি। প্রথম তিন বছর ছিলাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। পরের দুই বছর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে। দুই জায়গাতেই সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি বলে মনে করি।’

প্রথমেই দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। দায়িত্ব ছাড়ার সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন ডলার। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বাণিজ্য সুবিধা বাড়িয়ে এই উন্নতি করতে পেরেছিলাম।’

চারটি নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অনেক পরিবর্তন আনতে পেরেছেন বলে দাবি করে ফারুক খান বলেন, ‘আগে ভোজ্যতেলে ডিও বিক্রি হতো। সেটা বন্ধ করেছি। প্রতিযোগিতা আইন করে সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছি। এমএলএম আইন করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করেছি। আগে একটি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করতে কয়েক মাস সময় লাগতো। এখন সেটি ২ থেকে তিন দিনে সম্ভব। এ সব পদক্ষেপের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।’

কিন্তু ব্যবসার সুযোগ কি বৃদ্ধি পেয়েছে, সহজ হয়েছে? জবাবে ফারুক খান বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করার জন্য অনেক নিয়ম কানুনের বেড়াজালে পড়তে হয়, লাইসেন্স পাওয়া, লোন পাওয়া থেকে শুরু করে নানান সমস্যায় পড়তে হয়। এই জায়গাগুলো আরও সহজ করার প্রয়োজন আছে। আমার সময়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আরো কাজ করার সুযোগ আছে।’

টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এর কারণ কী? সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মতে টিসিবি’র ব্যবসায়ে জড়ানো উচিত না। কারণ সরকার ব্যবসা করলে ফল ভালো হয় না। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হলে শুধু টিসিবি ভূমিকা রাখতে পারে।’

বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কে ফারুক খান বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ বিমানকে গতিশীল করা। কারণ এটি দেশের পতাকাবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। বিমানের কাজে গতিশীলতা আনতে পেরেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে ৬’শ কোটি টাকার লোকসানও হয়েছে। আমার দায়িত্ব ছাড়ার সময় সর্বশেষ ২০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফ্লাইটের পরিমাণ বেড়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের যথেষ্ট উন্নতি করেছি।’

গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিমান লাভজনক হল। অথচ রাজনৈতিক সরকারের সময় লোকসানে থাকছে এর কারণ কি? জবাবে ফারুক খান বলেন, ‘ওই সরকার হাজার খানেক লোক ছাঁটাই করে খরচ কমিয়ে দিয়েছিল। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার এভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’

(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এইচএসএম/ এনআই/জানুয়ারি ২১, ২০১৪)