যশোর সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ জানুয়ারি যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায় সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসবেন। ভাষণ দেবেন স্থানীয় নওয়াপাড়া শংকরপাশা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের জনসভায়।

এ কারণে যশোরের শিল্প শহর নওয়াপাড়ায় এখন সাজ সাজ রব। দেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর এ অঞ্চলে আগমন কিংবা জনসভা এটাই প্রথম। এখানকার মানুষের মাঝে তাই বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চাপাতলা মালোপাড়ায় ঘটে যায় এ অঞ্চলের সবচেয়ে বাজে ঘটনা। চরম দুঃখের পর প্রধামন্ত্রীর আগমনে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে তাই বইছে সুখের বাতাস।

প্রধানমন্ত্রী আসবেন তাই রাস্তাঘাট সংস্কার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হচ্ছে মালোপাড়াসহ অভয়নগরের নওয়াপাড়া অঞ্চল। দ্রুতগতিতে চলছে উন্নয়নমূলক নানা কাজ। বিদ্যুৎ সংযোগপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে গেছে ডিশ লাইন। নির্মাণ করা হচ্ছে মালোপাড়ার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঘরবাড়িও।

স্থানীয়রা জানান, বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল মালোপাড়ার বাসিন্দারা। আশপাশে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও মালোপাড়ার ১১০ পরিবারে ছিল না সেই সুবিধা। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনোত্তর তাণ্ডবের পর সেখানে বিদ্যুতের খুঁটি পোতা হয়েছে। কাঁচা রাস্তা পাকাকরণে হরদম কাজ চলছে। বিজিবির তত্ত্বাবধানে করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি নির্মাণের কাজ।

তাই ক্ষতিগ্রস্ত মালোপাড়ার বাসিন্দাদের মাঝেও আনন্দের বাতাস বইছে। এই প্রথমবারের মতো বিদ্যুতায়িত হচ্ছে তাদের এলাকা, প্রথম ব্যবহার করতে পারবেন পাকা রাস্তা। ক্ষতিগ্রস্তরা পাবেন সেমিপাকা ঘর। সর্বোপরি প্রথমবারের মতো কাছে পাবেন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে।

কথা হয় মালোপাড়া অরুণ ও সুশীল সরকারের সঙ্গে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী আসছেন তাদের এলাকায়-এর চেয়ে খুশির আর কী হতে পারে- বললেন তারা। পাকা রাস্তা, বিদ্যুতের ব্যবস্থাও হয়ে গেছে। দাবি এখন একটাই, অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পটি যেন স্থায়ীভাবে রাখার অনুমতি দেন প্রধানমন্ত্রী।

শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের সভাপতি শেখর বর্মণ বলেন, এ পর্যন্ত আমরা নগদ প্রায় ২০ লাখ টাকা সহায়তা পেয়েছি। দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত চাল, ডাল, তেল, ঢেউটিন ও কম্বল। স্কুলের জন্য পেয়েছি প্রায় তিন লাখ টাকা, মন্দিরের জন্য ৭৫ হাজার টাকা।

তিনি আরো বলেন, এখন আর অনুদানের প্রয়োজন নেই। আগে হিন্দু-মুসলিম আমরা যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থানে ছিলাম, সেভাবেই থাকতে চাই। সে রকম পরিস্থিতি ফিরে আসুক।

বিজিবি খুলনা রিজিয়নের পরিচালক মতিউর রহমান জানান, মৎসজীবী সমিতির একটি ঘরসহ ১০টি সেমিপাকা বাড়ি তারা নিজস্ব অর্থায়নে করছেন। পর্যায়ক্রমে অন্য ঘরগুলোও তৈরি করা হবে।

প্রসঙ্গত, মালোপাড়ায় মোট ১১০টি পরিবার রয়েছে। যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা ৫১।

পল্লী বিদ্যুতের নওয়াপাড়ার উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহজাহান কবির বলেন, ইতোপূর্বে মালোপাড়ায় বিদ্যুতায়নের জন্য টেন্ডার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী আসছেন তাই কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে।

রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী সামসুর রহমান বলেন, আপাতত ৫০০ মিটার কাজ নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে নিয়ম-কানুনের কোনো চিন্তা করা হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

এদিকে, উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে অভয়নগর উপজেলাসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। নওয়াপাড়া শংকরপাশা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অবিরাম কাজ করে চলেছেন শতাধিক কর্মী। গোটা জনসভাস্থল ও এর আশপাশে সকাল থেকেই রয়েছে পুলিশের কড়া প্রহরা।

(দ্য রিপোর্ট/জেএম/এমএআর/এনআই/জানুয়ারি ২১, ২০১৪)