দেশের জেলা জজ আদালতগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে ২৮ জেলার জজ আদালতের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৯ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাকি জেলাগুলোয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। যে কোনো সময় একনেকে এটি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। ফলে জজ আদালতের এজলাস ও অন্যান্য সুবিধাদি বাড়বে, জজ ও সংশ্লিষ্ট স্টাফদের কাজের পরিবেশ উন্নত হবে, আইনজীবী, মামলার বাদী-বিবাদীদের জন্য দাফতরিক সুবিধা বাড়বে। সেই সঙ্গে দ্রুত বিচার নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে থাকবে ৬২ হাজার ৬১২ বর্গমিটার ভবন নির্মাণ, ৬১ হাজার ১১৩ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়ন, বহিঃপানি সরবরাহ ও বিদ্যুতায়ন, সোলার প্যানেল স্থাপন ও বিদ্যমান অবকাঠামোর সংস্কার। এছাড়া অফিস আসবাবপত্র ক্রয় ও সংস্কার করা হবে।

প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ও পরিকল্পনা সচিব ভূ্ঁইয়া সফিকুল ইসলাম জানান, এ উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে আইন ও বিচার বিভাগের কার্যকর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। তাই প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতের অনুকূলে অনুমোদিত প্রকল্পের জন্য সরকারি তহবিলের থোক বরাদ্দ ২৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে।

যে ২৮টি জেলায় প্রথম পর্যায়ে জজ আদালতের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে তার মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া, কক্সবাজার, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ, নওঁগা, নাটোর, জয়পুরহাট, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর, মেহেরপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল ও বরগুনা।

এর আগে ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে ১৪৫ কোটি ৪৯ হাজার টাকা করা হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত পিইসি সভার মাধ্যমে প্রকল্প ব্যয় আরো কমিয়ে ১৪৯ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার টাকা করা হয়। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সময়মত বিচার পাওয়া যে কোনো দেশের সুশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অবকাঠামোগত অপ্রতুলতার কারণে এদেশের বিচার ব্যবস্থা বিদ্যমান সক্ষমতার পুরোটাই ব্যবহার করতে পারছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মামলার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক জেলায় ২/৩ জন বিচারক একই রুম বা এজলাস ভাগাভাগি করে ব্যবহার করেন। ফলে তাদের কাছ থেকে সময়মতো দক্ষ ও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। অনেক আদালত ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অবকাঠামোগত অপ্রতুলতার কারণে অতিরিক্ত বিচারকও নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশের ২৮টি জেলার জজ আদালত ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নের এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মন্ত্রণালয় থেকে ১৫১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়।

(দ্য রিপোর্ট/ জেজে/ ডব্লিউএন/এনআই/জানুয়ারি ২২, ২০১৪)