গাজীপুর সংবাদদাতা : গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ নদী তীরে শুক্রবার শুরু হবে বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন চলছে প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভা। ইজতেমা ময়দানে দেশ বিদেশের মুসল্লি আসতে শুরু করেছেন। বাঁধভাঙা স্রোতের মতো আসছেন তারা। বাস, ট্রাক, টেম্পোতে প্রচণ্ড ভিড়। দীর্ঘ ৪৮ বছরের পরিক্রমায় অনেকের কাছে বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম বিশ্বের মিলনমেলা যেন।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, তাবলীগ জামায়াতের লাখ লাখ সদস্যের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর।

মাঠে এসেই মুসল্লিরা তাদের বাসস্থান ঠিক করে নিচ্ছেন। অনেকেই পুরোনো সাথীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ নিচ্ছেন, কুশলাদি বিনিময়ে ব্যস্ত অনেকেই। সুদানের মুসল্লি আবদেল্লাহ বিন কাসেদ জানালেন, ইজতেমা তাদের ভ্রাতৃত্ববোধকে জাগ্রত করছে। বাংলাদেশ তাদের কাছে যেন মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্র মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সব বয়সের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে তাবলীগের সাথীদের সেবা করার পাশাপাশি ধর্ম প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। আল্লাহকে খুশি করার এক অপার সুযোগ। বিদেশিদের গাইড করার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার কথাও বললেন তরুণ এ মুসল্লি।

দীর্ঘ সময় ধরে যারা ইজতেমা ময়দান প্রস্তুতের কাজে নিয়োজিত বারিধারা মাদ্রাসার ছাত্র আমানুল্লাহ ও রফিকুল ইসলাম। প্রস্ততি কাজ সম্পন্ন করতে পেরে তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি।

প্যান্ডেল নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ, নিরাপত্তা, পন্টুন ব্রিজ নির্মাণসহ সব কাজই প্রায় শেষ। শেষ হয়েছে খিত্তা নাম্বার টানানো, পয়েন্ট মার্কিং, নামাজের দীর্ঘসারির দাগ চিহ্নিতকরণও।

তাবলীগ জামায়াতের সাথী ভাইদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারি বিভিন্ন বিভাগও তাদের সেবার প্রস্ততি প্রায় শেষ করে এনেছেন। দুই পর্বে লাখ লাখ মুসল্লি ৬ দিনের অবস্থানকালে তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর ১২ হাজার সদস্য। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় র‌্যাব সদস্য থাকবেন সহস্রাধিক র‌্যাব সদস্য। থাকবে‌ র‌্যাবের সিসিটিভি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, গোয়েন্দা নজরদারি ছাড়াও আকাশে থাকবে হেলিকপ্টার।

জয়দেবপুর থানার উপ-পরিদর্শক আইউব আলী ইজতেমা পূর্ব নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত। তিনি বলেন, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ, তল্লাশিসহ ইজতেমা ময়দানের তথ্য দেওয়ার কাজ করছেন নিরাপত্তা কর্মীরা।

পুলিশ ১৬০ একর জমির উপর স্থাপন করা হচ্ছে প্যান্ডেল। তার আশপাশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে থাকবে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, স্বাস্থ্য বিভাগ, ডেসকো, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ সেবাদানকারী নানা সংগঠনের কর্মকাণ্ড। দুই পর্বের ইজতেমার প্রথমটি হবে ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয়টি হবে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রায় দুইশ দেশের তাবলীগ অনুসারীরা ছাড়াও বাংলাদেশের ২৯টি জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় আসবেন, ৪০ খিত্তায় অবস্থান করবেন তারা। তবে বিদেশিদের জন্য কিছুটা নিরাপদ বাসস্থান গড়া হয়েছে মাঠের একপ্রান্তজুড়ে। বিদেশি মেহমানদের খাওয়ার ব্যবস্থা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। সে জন্য রয়েছে পৃথক আয়োজনও।

শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম।

তাবলীগ জামায়াতের লাখ লাখ সদস্যের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছে কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীর।

(দ্য রিপোর্ট/এমএমএফ/এইচএসএম/সা/জানুয়ারি ২৩, ২০১৪)