আপনারা এ মাটির সন্তান, নিজেদের অধিকার নিয়ে বাঁচবেন
‘বিএনপি নেতা এখন জামায়াতের আমির’
যশোর সংবাদদাতা : বিএনপি নেতা এখন জামায়াতের আমিরে পরিণত হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আন্দোলনে জনগণের সাড়া না পেয়ে সারা দেশে সন্ত্রাস কায়েমের মাধ্যমে তিনি জামায়াতের আমিরে পরিণত হয়েছেন। তার রাজনীতি কেবল জামায়াতকে নিয়ে। তাদের সঙ্গে ওনার উঠা-বসা।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া জনগণের সমর্থন না পেয়ে সারাদেশে খুন, ধর্ষণ, লুটপাটের রাজনীতি করছেন। তার আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় তিনি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন।’
সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে পার পাওয়া যাবে না বলে তিনি বিরোধী দলকে সতর্ক করে দেন।
প্রধানমন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এখানকার মাটির সন্তান। আপনারা এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববেন না। আপনারা মনে জোর নিয়ে, নিজেদের অধিকার নিয়ে বাঁচবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যত কঠোর হওয়া দরকার সরকার হবে।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া শংকরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘খালেদা জিয়া এ দেশের মানুষকে অশান্তির মধ্যে রেখে তার প্রভু পাকিস্তানীদের খুশি করাতেই ব্যস্ত রয়েছেন।’
‘তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছেন’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে। গোলাপীরে গোলাপী... ট্রেন মিস করলি!’
প্রধানমন্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদ্রূপ করে বলেন, ‘গোপালগঞ্জের ওপর আপনার কেন এত রাগ আমরা জানি। কেননা গোপালগঞ্জে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। দেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করেন না বলেই গোপালগঞ্জের ওপর আপনার এত রাগ।’
‘গোপালীরা কপালি হয়’ দাবি করে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের সাথেই গোটা দেশবাসী রয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের উন্নয়নে বিশ্বাস করে।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া যতই আন্দোলন করুন না কেন যুদ্ধাপরাধীদের তিনি রক্ষা করতে পারবেন না।’
দেশব্যাপী উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারা দেশে উন্নয়নের কাজ করে চলেছি। যে সব কাজ অসমাপ্ত রয়েছে সেগুলো করা হবে।
যশোরকে সিটি কর্পোরেশন, অভয়নগরে বাইপাস রোড, ভৈরব নদের উপর ব্রিজ নির্মাণ, নওয়াপাড়া শংকরপাশা স্কুল ও নওয়াপাড়া কলেজকে সরকারিকরণের দাবি উত্থাপিত হলেও প্রধানমন্ত্রী এ সব বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজুর সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদাক বি এম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, মৎস্য প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমতআরা সাদেক, মুন্নুজান সুফিয়ান, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি, রণজিৎ রায় এমপি প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোটের পর সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার যশোরের অভয়নগরের মালোপাড়া পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ভাববেন না এ মাটি আপনাদের না। আপনারা এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববেন না। এ মাটিতে মনের জোর নিয়ে থাকবেন। অধিকার নিয়ে বাঁচবেন।
গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অভিযোগে মালোপাড়ায় হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বাড়িঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার জন্য বুধবার দুপুরে হেলিকপ্টারে করে যশোরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। অভয়নগরের নওয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নামার পর সেখান থেকে সরাসরি চাপাতলা গ্রামের মালোপাড়ায় যান। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেদিনের হামলার ঘটনার বিবরণ দেন।
পরে শেখ হাসিনা মালোপাড়ার রাধাগোবিন্দ মন্দিরের সামনে ক্ষতিগ্রস্ত ৫১টি পরিবারের সদস্যদের হাতে ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার সহায়তার চেক তুলে দেন।
(দ্য রিপোর্ট/জেএম/এমএআর/আরকে/জানুয়ারি ২৩, ২০১৪)