এডওয়ার্ড সাইদ
দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : বিশ্ববরেণ্য তাত্ত্বিক ও গবেষক এডওয়ার্ড সাইদ ১৯৩৫ সালের ১ নভেম্বর জেরুজালেমে জম্মগ্রহণ করেন। প্রাচ্যে উপনিবেশবাদ ও পশ্চিমা জ্ঞানতাত্ত্বিক আগ্রাসন নিয়ে তিনি ছিলেন উচ্চকন্ঠ। পশ্চিমের আধিপত্য আর দমননীতির সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করে রচিত অরিয়েন্টালিজম তাকে কালজয়ী লেখকের আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি দার্শনিক মিশেল ফুঁকো দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। সাইদ নিজেও প্রভাবিত করেছেন সারাবিশ্বের অগণিত রাজনীতিবিদ, তাত্ত্বিক ও গবেষককে।
তার বাবা ও মা উভয়েই ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট। কায়রো আর জেরুজালেমে বার বার স্থানান্তরের কারণে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত কোথাও স্থায়ী হতে পারেননি সাইদ। ১৯৪৭ সালে জেরুজালেমের সেন্ট জর্জেস একাডেমিতে ভর্তি হন। এরপর আরব ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হলে সাইদের পরিবার আবার জেরুজালেম থেকে কায়রো চলে যায়। এ সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর চলা ইসরায়েলি নিপীড়ন সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন। কায়রোতে তিনি আলেকজান্দ্রিয়ার ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের নর্থফিল্ড মাউন্ট হারমন স্কুলে ভর্তি হন।
১৯৬৩ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৩ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া হার্ভার্ড, জন হপকিন্স, ইয়েলসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করেন।
১৯৭৮ সালে তার বিখ্যাত বই অরিয়েন্টালিজম প্রকাশিত হওয়ার পরপরই প্রায় ৩০টির মতো ভাষায় অনুদিত হয়। এ বইয়ে ইতিহাস রচনা প্রসঙ্গে সাইদ বর্ণনা করেছেন- ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব বা নৃবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো সবই উপনিবেশের নির্মাণ।
ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবি আলোকপাত করেন ১৯৮০ সালে প্রকাশিত ‘দা কোশ্চেন অব প্যালেস্টাইন’ বইতে। এছাড়া তার বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘আফটার দা লাস্ট স্কাই’ (১৯৮৬), ‘দ্যা পলিটিক্স অব ডিসপজিশন’ (১৯৯৪), ‘কাভারিং ইসলাম’ (১৯৮১), ‘কালচার এন্ড ইম্পেরিয়ালিজম’ (১৯৯৩), ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দি ইন্টেলেকচ্যুয়াল’ (১৯৯৪) ও ’ফ্রম অসলো টু ইরাক অ্যান্ড দি রোড ম্যাপ’ (২০০৪)। বাংলায় তার বেশ ক’টি বই অনুদিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অরিয়েন্টালিজম, কাভারিং ইসলাম ও রিপ্রেজেন্টশনস অব দ্য ইন্টেলেকচুয়াল।
ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন সাইদ। ১৯৭৭ সালে ফিলিস্তিনি পার্লামেন্টের প্রবাসী সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চুক্তির শর্ত পছন্দ না হওয়ায় ১৪ বছরের এই দায়িত্বে ইস্তফা দেন।
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সাইদ ২০০৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান।
(দিরিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/জেএম/নভেম্বর ০১, ২০১৩)