জুলাই পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচি নেই বিএনপির
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপে রেখে দাবি আদায় করতে চায় বিএনপি। যে কারণে দেশি-বিদেশি সমর্থন আদায়ে আগামী জুলাই পর্যন্ত কোনো কঠোর কর্মসূচি না দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। জোটের পক্ষ থেকেও সময় উপযোগী কর্মসূচির ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।
নেতারা বলছেন, সরকারের ভাবমূর্তির ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি। তবে আপাতত কোনো কঠোর কর্মসূচিতে না গিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে চাপে রাখতে চায় বিরোধী জোট।
জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করি। আশা করি, সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শ্রদ্ধাশীল হয়ে প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে জনগণের দাবি মেনে নেবে।
আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে ইরান বলেন, ‘সরকারের ভাবমূর্তির ওপর নির্ভর করছে ১৮ দল কঠোর কর্মসূচিতে যাবে কিনা।’
আগামী কয়েক মাস খেলাধুলার বড় ইভেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলংকা ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর, এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ, এসএসসি পরীক্ষা, ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল পরীক্ষাসহ উপজেলা নির্বাচন রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি দলগতভাবে না হলেও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে। সেক্ষেত্রে কঠোর কর্মসূচিতে না যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে এখনই দলের পক্ষ থেকে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। কেউ কেউ বলছেন, সরকারের ভাবমূর্তি দেখে কঠোর কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
বাংলাদেশে এশিয়া কাপ চলাকালে বিএনপির কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আন্দোলন সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে এশিয়া কাপ হবেই।’
আব্দুল লতিফ বলেন, ‘গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে। এর বাইরে কিছু বলার নেই।’
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বেকায়দায় রয়েছে বিএনপি। ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে আন্তর্জাতিক চাপও ক্রমশই বাড়ছে। এ অবস্থায় আপাতত কঠোর কর্মসূচি না দিয়ে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে আন্দোলনের প্রস্তুতির দিকেই মনোযোগ দিতে চায় বিএনপি। একই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা চান দলের প্রধান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার বিএনপির গণসমাবেশে খালেদা জিয়া দ্রুত নতুন নির্বাচন নিয়ে সরকারকে সংলাপ কিংবা সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের মনোভাবও দেখতে চান তিনি এবং তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে চান। যে কারণে আরও কিছু দিন সময় নেবেন তিনি। খালেদা জিয়া এ সময়ের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও শক্তিশালী করবেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ এশিয়া কাপ এবং ১৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল টি-২০ বিশ্বকাপ হবে। এর আগে দুটি টেস্ট, দুটি টি-২০ এবং তিনটি ওয়ানডে খেলতে ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসার কথা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের। খেলা চলাকালে কোনো ধরনের কঠোর কর্মসূচিতে না যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জুন মাসে আবার রয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল, চলবে মাসব্যাপী।
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ। কিন্তু সেই দিন তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। ওই দিন সাংবাদিকদের লতিফ জানান, আসন্ন এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে বিসিবির সঙ্গে বৈঠকের পর খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত জানতে এবং এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেই তিনি এসেছিলেন। বিসিবির সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল লতিফ বৈঠক করেন। বাংলাদেশে জানুয়ারি থেকে ক্রিকেটের টানা তিনটি আসর নিয়ে আলোচনা হয় তাদের মধ্যে।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উদ্বেগ বাড়ছে। তাই ক্রিকেটকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখতে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে চিঠি পাঠানোর উদ্যোগ নেয় বিসিবি।
৪ জানুয়ারি কলম্বোয় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বৈঠকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এশিয়া কাপ চলার সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এর আগে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যে সফর বাতিল করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনূর্ধ্ব-১৯ দল দেশে ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে শঙ্কার কথা জানায় শ্রীলংকা ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। অবরোধ ও হরতালের মধ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে গত ৮ ডিসেম্বর ওয়ানডে সিরিজ থেকে প্রত্যাহার করে নেয় দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।
গুলশানে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার রাতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি বলেন, জনগণের কথা বিবেচনায় রেখেই কর্মসূচি দেব। শীত কমলে আমি সারাদেশ সফরে বের হব। জেলা পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক সফর শুরু হবে। এ যাবত যত গুম-খুন হয়েছে তাদের পরিবার নিয়ে ঢাকায় আন্তর্জাতিক কনভেনশন করা হবে।
এ ছাড়া মতবিনিময়ের সময় খালেদা জিয়া আগামী দিনের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী জেলে রয়েছে। এরপর বিশ্ব ইজতেমা, ‘এ’ লেভেল ‘ও’ লেভেলসহ বিভিন্ন পরীক্ষা রয়েছে। তাই জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে নতুন কৌশলে যথাসময়ে পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, সবকিছু বিবেচনায় কঠোর কর্মসূচি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বিএনপিকে। তবে আগামী দিনে কর্মসূচি নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা এখনই কিছু বলতে চান না।
দলের একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে তারা কথা বলতে চাননি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা আপাতত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে থাকতে চাই। দলের সিনিয়র নেতাসহ অনেক নেতাকর্মীকে জেলে আটক রাখা হয়েছে। তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থাসহ সাংগঠনিকভাবে আরও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। কর্মসূচি সফল করতে সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব কিনা।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এইচএসএম/আরকে/সা/শাহ/জানুয়ারি ২৩, ২০১৪)