চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : চুয়াডাঙ্গায় আটক এক ছাত্রলীগকর্মীর জামিনের পর শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা বিক্ষিপ্ত হামলা করে শহরে দোকানপাট ও মোটরযান ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পরপরই শহরের দোকনপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।

চুয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ এরশাদুল কবির চৌধুরী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ২০ জানুয়ারি দুপুরে চুয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ শহরের বাজারপাড়ার মুক্তার বিশ্বাসের ছেলে একটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলার এজাহারভূক্ত আসামি আব্দুল মোমিনকে আটক করে। সে চুয়াডাঙ্গা টেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র। এরপর ছাত্রলীগের এক অংশ তাকে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও মেধাবী ছাত্র দাবি করে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ছোট ভাই পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন পুলিশ সুপার ও চুয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জকে মোবাইল ফোনে আব্দুল মোমিনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তদবির করে। এ দুই পুলিশ কর্মকর্তা তার অনুরোধ না রাখলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শহরে চুয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জের অপসারণ ও আটক ছাত্রলীগ কর্মীর মুক্তির দাবিতে পৌর এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ওইদিন চুয়াডাঙ্গা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ হোসেন দুদু এক বিবৃতিতে জানান, আটক আব্দুল মোমিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। এরপর ওইদিন পুলিশ আটক ছাত্রলীগ কর্মীকে আদালতে সোপর্দ করে।

বৃহস্পতিবার আদালত থেকে আটক ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল মোমেন জামিনে মুক্তি পায়। তাকে সন্ধ্যা ৭টার পর চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ভাইয়ের ছেলে চুয়াডাঙ্গা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক ও ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক তানিম হাসান তারেক, জামিনের মুক্তি পাওয়া আব্দুল মোমেনকে কারাগার থেকে নিয়ে আসার সময় কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রলীগকর্মী সশস্ত্র অবস্থায কেদারগঞ্জপাড়ার নতুন বাজারে কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করে। ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশনের সামনে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। তারপর তারা কোর্টপাড়ায় রেজা স্টোরে ভাঙচুর করে। সেখানে ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ করার জন্য তারা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পরে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে নির্বিচারে মোটরযান ও দোকানপাট ভাঙচুর করতে করতে পান্না সিনেমা হল সড়ক ধরে যেতে থাকে।

এ সময় তারা সেখানে অবস্থিত বিএনপি নেতা লে. কর্নেল (অব) সৈয়দ কামরুজ্জামানের কার্যালয় ভাঙচুর করে। ছাত্রলীগের এ উচ্ছৃঙ্খল দলটি সশস্ত্র অবস্থায় শহরের রেলপাড়ায় গিয়ে অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফির বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার স্ত্রী অ্যানিকে মারপিট করে। আহত অবস্থায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তারা শফির ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এ ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান জিপু ও বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ হোসেন দুদু সমর্থিত কিছু ব্যবসায়ী লাঠিসোটা নিয়ে কেদারগঞ্জপাড়ায় নতুনবাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করার প্রতিবাদে পাল্টা হামলা চালাতে গেলে শহরের শহীদ হাসান চত্বরে পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ছাত্রলীগের গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেলের জ্বীনতলা মল্লিকপাড়ার বাড়িতে কে বা কারা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।

চুয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ এরশাদুল কবির চৌধুরী আরো জানান, পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ ভাঙচুরের ব্যাপারে থানায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় তিনি ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। তবে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে যা ঘটেছে তা ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলের কারণে।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল কারও সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সকলের মোবাইল ফোনই বন্ধ পাওয়া গেছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরআর/এপি/জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)