সাবধানী নীতিতে বিসিবি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আইসিসির আয়ের অন্যতম উৎস ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড। আর্থিক উৎসে যারা রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা। সেখানে তারা তার সিংগভাগ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে দ্বি-স্তরবিশিষ্ট টেস্ট প্রবর্তনের আইডিয়া বাস্তবায়ন তো চাইবেই। আইসিসির আয় বেড়ে এখন ১৫০০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, সেখানে আয়ের মাত্র ২৫ শতাংশবরাদ্দ ১০টি টেস্ট প্লেয়িং দেশের বোর্ডের মধ্যে। বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ের মতো আইসিসি’র মেগা আসর থেকে সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পেতো বিগ থ্রি’। এটাই মেনে নিতে পারছে না ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। আইসিসি’র উপর চাপ সৃষ্টি করতে বিসিসিআই’র পক্ষ থেকে চারটি শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যে শর্ত সমূহের মধ্যে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে বেশি ভাগ দেওয়া ছাড়াও ৩ বছর অন্তর অন্তর আইসিসি’র মেগা আসর ভারতে আয়োজন, আইসিসি’র প্রেসিডেন্ট পদকে অলঙ্কারিক করে চেয়ারম্যান পদ তৈরি এবং সেই পদে শ্রীনিবাসনকে বসানো! তা না হলে অইসিসি ছেড়ে বেরিয়ে আসার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছে বিসিসিআই। অনলাইনে এ সংবাদই দিয়েছে ভারতের বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার।
আইসিসি’র ফিন্যান্স এন্ড কমার্শিয়াল কমিটি দ্বি-স্তরের টেস্ট প্রবর্তনের যে প্রস্তাব দিয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সুপারিশের প্রেক্ষিতে, বৃহস্পতিবার সেই প্রস্তাবের খসড়ায় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বোর্ড বিসিসিআই দিয়েছে অনুমোদন। মা’র মৃত্যুর কারণে বৃহস্পতিবার বিসিসিআই’র সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি সভাপতি শ্রীনিবাসন, তবে সহ-সভাপতি শিবলাল যাদবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে ক্রিকইনফোকে বিসিসিআই জানিয়েছে- ‘ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবেইআইসিসি’র ওয়ার্কিং গ্রুপ এই প্রস্তাব দিয়েছে।’ আইসিসি’র ফিন্যান্স এন্ড মার্কেটিং কমিটির এ প্রস্তাবকে সমর্থন করে বুধবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া দিয়েছে বিবৃতি। ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিকা প্রধান এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করায় তার উপর চটেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া প্রধান। বৃহস্পতিবার বিসিসিআই’র পক্ষ থেকেও প্রস্তাবকে করা হয়েছে সমর্থন। আসছে ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি দুবাই সভায় এই প্রস্তাব অনুমোদিত হলে ফিউচার ট্যুর প্রজেক্ট (এফটিপি) অনুসৃত হবে না।
ফিউচার ট্যুর প্রজেক্ট (এফটিপি) আইসিসি প্রবর্তন করেছে ২০০১ সালে নির্ধারিত মেয়াদে প্রতিটি টেস্ট দল পরস্পরের সঙ্গে হোম এন্ড অ্যাওয়ে টেস্ট সিরিজ খেলবে বলেই। প্রথম ৫ বছর মেয়াদী এফটিপিতে বাংলাদেশ খেলেছে ৪০টি টেস্ট। পরবর্তী ৬ বছরে তা নেমে এসেছে ৩৩টিতে। ২০১২ সালে ৮ বছর মেয়াদী এফটিপিতে বাংলাদেশের খেলার কথা ৪৮টি টেস্ট। ‘বিগ থ্রি’র প্রস্তাব অনুমোদিত হলে এই মেয়াদে ১৪ টেস্টে থমকে যেতে হবে বাংলাদেশকে। এমন পরিস্থিতির মুখে কি বলবেন, ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না নাজমুল হাসান পাপন এমপি- ‘মানসম্মান ও আছে, আবার বাস্তবতাও মানতে হবে। কোনো দেশ হিসেবে এটা গ্রহণ করার কোনো কারণ নেই। আইসিসি’র কর্তৃত্ব বলে কিছুই থাকবে না।’
বাংলাদেশ হারাবে টেস্ট খেলার নায্য অধিকার। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে বৃহস্পতিবার বিসিবি’র বোর্ড সভায় আলোচিত হয়েছে ইস্যুটি। তবে দ.আফ্রিকা এবং পাকিস্তানের মতো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিতে পারেনি বিসিবি। বরং সাবধানী নীতি অনুসরণের পক্ষে বোর্ড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবি’র একাধিক পরিচালক জানিয়েছেন-‘এই প্রস্তাবের খসড়া পড়ে বিসিবি সভাপতি আমাদেরকে প্রস্তাবের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, সবাই এ বিষয়ে একমত। প্রেসিডেন্টের উপর পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবের বিপক্ষে ৪টি ভোটের প্রয়োজন। যদি তিনটি বোর্ড প্রস্তাবের বিপক্ষে আইসিসিতে ভোট দেয় তাহলে বিসিবি’র ভোটও সে দিকেই পড়বে। আর যদি ২টি বোর্ডের বেশি প্রস্তাবের বিপক্ষে না থাকে, তাহলে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সামনে এশিয়া কাপ এবং টোয়েন্টি ২০ বিশ্বকাপ। সে জন্যই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাই আপাতত উত্তম।’
আইসিসি’র ফিন্যান্স এন্ড মার্কেটিং কমিটির এমন প্রস্তাব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে। ‘এই প্রস্তাব ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড তিনটি শক্তিশালী দেশ দিয়েছে। নিশ্চয়ই তারা হোমওয়ার্ক করে প্রস্তাব দিয়েছে। বিস্তারিত না জেনে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। অন্য দেশগুলোর বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে দেখি কি করা যায়।আমার দুবাই যাবার কথা ২৬ জানুয়ারি। কিন্তু আমি একদিন আগেই যাব। অবস্থা বুঝেই ব্যবস্থা নেব। যদি ভেটো আসে তাহলে কঠিন লড়াই হবে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের হাতে ক্ষমতা দিতে নিউজিল্যান্ড সমর্থন এরই মধ্যে দিয়ে ফেলেছে। আসলে পরিস্থিতিটা কি সেটা বুঝতে হবে।’
তবে এক্ষুনি উদ্বিগ্ন হচ্ছেন না তিনি- ‘এখন আমাদের টেস্ট রেটিং ১৭ পয়েন্ট, যদি ওদের সঙ্গে খেলে জিততে পারি তাহলে ৮ নম্বরে যেতে পারব। তাছাড়া ওদের সঙ্গে টেস্ট খেলতে পারব না, এমন কিন্তু নয়। এখন যেখানে এফটিপি অনুসারে খেলতে পারছি, তখন হয়তোবা দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে খেলতে পারব।’
(দ্য রিপোর্ট/এএস/এপি/জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)