উইনস্টন চার্চিল
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ইংরেজ রাজনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, লেখক ও চিত্রশিল্পী উইনস্টন চার্চিল ১৯৬৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়েন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেশি পরিচিত। তাকে বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি সাহিত্যে নোবেল পাওয়া একমাত্র ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া প্রথম ব্যক্তি যাকে সন্মানসূচক আমেরিকান নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০০২ সালে বিবিসির এক জরিপে সর্বকালের সেরা বৃটেনবাসী হিসেবে মনোনীত হন। তিনি নানা বিতর্কিত মন্তব্যের জন্যও পরিচিত। এছাড়া তাকে নিয়ে অনেক কৌতুককর ঘটনার কথা প্রচলিত আছে।
তার পুরো নাম স্যার উইনস্টন লিওনার্ড স্পেন্সার চার্চিল। ১৮৭৪ সালের ৩০ নভেম্বর অভিজাত স্পেন্সার পরিবারের একটি অংশে জন্মগ্রহণ করেন। তখন তার পরিবার অক্সফোর্ডশায়ারে বসবাস করত। তার বাবা লর্ড রানডলফ চার্চিলও একজন প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকুয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। তার মা জেনি জেরোমি ছিলেন আমেরিকান সোশিয়ালেট। তার শৈশবের বড় অংশ কাটে ডাবলিনে। পারিবারিক পরিবেশেই পড়ালেখার হাতেখড়ি। ছোটবেলা থেকে তিনি স্বাধীনচেতা ও বিদ্রোহী স্বভাবের ছিলেন। একাডেমিক রেকর্ড খুব একটা ভালো ছিল না। প্রায়শ শাস্তিও পেতেন। তিনি সর্বশেষ হ্যারো স্কুলে পড়েন ১৮৮৮ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর যোগ দেন হ্যারো রাইফেল কপর্সে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ভারত, সুদান, মিশরসহ কয়েকটি দেশে মিলিটারি সার্ভিসে নিযুক্ত ছিলেন।
প্রায় ৫০ বছর তিনি রাজনীতির প্রথম সারিতে ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ক্যাবিনেটের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০০ সালে তিনি হাউস অফ কমন্সে নির্বাচিত হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে তিনি প্রেসিডেন্ট অব দ্য বোর্ড অব দ্য ট্রেড, হোম সেক্রেটারি ও যুদ্ধকালে আসকুইথ লিবারেল গর্ভমেন্টের ফার্স্ট লর্ড অব দ্য অ্যাডমিরালটির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রয়্যাল স্কটস ফাসিলিয়ার্সের ৬ নাম্বার ব্যাটেলিয়ানের ওয়ের্স্টান ফ্রন্টের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে মিনিস্টার অব মিউনিশনস, সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ওয়ার এবং সেক্রেটারি অব স্টেট ফর এয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের পর রক্ষণশীল বাল্ডউইন সরকারের (১৯২৪-২৯)চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকুয়ার ছিলেন। ত্রিশের দশকে তিনি হিটলারের উত্থান নিয়ে সচেতন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি আবার ফার্স্ট লর্ড অব দ্য অ্যাডমিরালটি নিযুক্ত হন। যুদ্ধকালেই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হন। সে সময় তার বক্তৃতা ও রেডিও কথামালা ব্রিটিশদের খুবই প্রভাবিত করে। তার সফল নেতৃত্বের কারণে জার্মান বাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হয়। তিনি কূটনীতিতে বেশ পারদর্শী ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল মৈত্রী গড়ে তুলেন। তার শাসনামলে ভারতে রাখা কিছু ভূমিকার কারণে তিনি বির্তকিত হন। বিশেষ করে যুদ্ধকালীন দুর্ভিক্ষের জন্য তাকে দায়ি করা হয়। ১৯৪৫ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি হারলে তিনি বিরোধী দলীয় নেতা হন। ১৯৫১ সালে আবার তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। অবসর নেন ১৯৫৫ সালে।
তিনি চল্লিশটির বেশি বই রচনা করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে ছয় খণ্ডে প্রকাশিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস। ১৯৫৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য বই হল- দ্য স্টোরি অব দ্য মালাকান্ড ফিল্ড ফোর্স (১৮৯৮), দ্য রিভার ওয়ার (১৮৯৯), সাভরোলা (১৯০০), লন্ডন টু লেডিস্মিথ ভায়া প্রেটোরিয়া (১৯০০), আয়ান হামিল্টনস মার্চ (১৯০০), লর্ড রানডলফ চার্চিল (১৯০৬), মাই আর্লি লাইফ: আ রোভিং কমিশন (১৯৩০), গ্রেট কনটেম্পরিয়াস (১৯৩৭), দ্য সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার (১৯৪৮-৫৪) ও আ হিস্ট্রি অব দ্য ইংলিশ-স্পিকিং পিপলস (১৯৫৬-৫৮)।
তার স্ত্রীর নাম ক্লেমেন্টাইন হোজিয়ের। তাদের প্রথম দেখা হয় ১৯০৪ সালে। তারা ১৯০৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিয়ে করেন। তার পাঁচ সন্তান।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)