কৃষিজমি রক্ষায় বহুতল ভবনের মহাপরিকল্পনা
দিরিপোট২৪ প্রতিবেদক : কৃষিজমি বাঁচাতে সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবন নির্মাণের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে দেশের তিনটি উপজেলায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে বিক্ষিপ্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্পব্যয়ে হাউজিং স্থাপন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎচালিত পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার, কমিউনিটিভিত্তিক বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন, উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে দল গঠন এবং সুফলভোগীদের দক্ষতা উন্নয়নে আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য উজ্জ্বল বিকাশ দত্তের মতে, এটি একটি নতুন পরিকল্পনা। কৃষিজমি রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীরা নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ পাবেন। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিত হবে। এসব দিক বিবেচনা করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ করা। এর মাধ্যমে উৎপাদনশীল কৃষিজমির অপচয় রোধ করার পশাপাশি জৈবসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের অধিকাংশ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নযোগ্য। তবে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রথম পর্যায় ২০১২ সালের ৪ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রকল্পটির ওপর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনটি উপজেলায় বাস্তবায়নের কাজ শুরু হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জনবহুল বাংলাদেশে কৃষিজমির পরিমাণ বিভিন্নভাবে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। কৃষিনির্ভর এ দেশে জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিক্ষয় ইত্যাদি কারণে আবাদি জমির ওপর একদিকে যেমন চাপ পড়েছে, অপরদিকে তেমনিভাবে রাসায়নিক ও ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহারের ফলে জমির উৎপাদনশীলতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কৃষিজমির এই অপচয়রোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে সরকার।
পাইলট আকারে ঢাকা, রাজশাহী ও বরিশালের ঘনবসতি কৃষিপ্রধান তিনটি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে অনুমোদন পেলে ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে ছয় তলাবিশিষ্ট ৩টি বহুতল ভবন নির্মাণ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনসহ উৎপাদিত কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সংশ্লিষ্ট ভবন নির্মাণ, সৌর প্যানেল স্থাপন, নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে আধার নির্মাণ ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণ।
এ ছাড়া গ্রামের ২৭২টি পরিবারকে ১টি অ্যাপ্রোচ সড়কের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা দেওয়া হবে। এর ফলে মূল সড়কের সঙ্গে বসতবাড়ির সংযোগ সড়ক হিসেবে সাড়ে ১৬ একর কৃষিজমি সাশ্রয় হবে। বর্তমানে গ্রামগুলোতে অপরিকল্পিত বাড়িঘর থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ওভারহেড লাইন নির্মাণে বড় অংশের সরকারি অর্থের অপচয় হয়। সেখানে একটি অ্যাপ্রোচ সড়কের মাধ্যমে এই সুবিধা দেওয়া গেলে ব্যয় কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
(দিরিপোর্ট২৪/জেজেড/এএস/এমডি/নভেম্বর ০১, ২০১৩)