বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারি প্রকল্পে প্রায় সোয়া ১৩ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিবিএসের উপ-পরিচারলক আবদুর রহিমকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. নজিবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মো. নজিবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে সুসংহত করতে একদিকে যেমন বিবিএসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি, অন্যদিকে তেমনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছি। অর্থনৈতিক শুমারির মতো প্রকল্পে দুর্নীতি হতে পারে এমনটি ধারণার মধ্যেই ছিল না। তারপরও প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর নিবিড় মনিটরিং করায় দুর্নীতির বিষয়টি উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। সে জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি থাকলেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হইনি।

বিবিএস সূত্র জানায়, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সেন্সাস উইং এর উপ-পরিচারলক আবদুর রহিম অর্থনৈতিক শুমারি প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক থাকার সময় আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন তারিখে মোট ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার ১৭৯ টাকা উত্তোলন করেন। এ ছাড়া একই সঙ্গে ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল ৪৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৪০ টাকা ভাঙানোর জন্য চেক ইস্যু করা হয়। ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের পরও অর্থের অভাবে অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩-এর গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রচার কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এরপর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫-এর বিধি ৩ (বি) এবং ৩ (ডি) অনুযায়ী অসদাচরণ এবং গুরুতর আর্থিক অনিয়মের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিবিএস। এরপরই ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা ১৯৮৫-এর ১১ বিধি অনুসারে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৯ মে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে কেন তাকে বরখাস্ত করা হবে না বা অন্য কোনো দণ্ড প্রদান করা হবে না জানতে চাওয়া হয়। এতে বলা হয়, এই অভিযোগ প্রাপ্তির দশ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তার ব্যক্তিগত শুনানি চান কিনা সেটিও জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। আবদুর রহিম ১৬ জুন লিখিত জবাব প্রদান করেন এবং ২ জুলাই তার ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

অভিযুক্ত আবদুর রহিমের জবাব ও শুনানি সন্তোষজনক না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তদন্তের জন্য বিবিএস-এর উপ-সচিব তাসলীমুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। তাকে আবারও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এর জবাব সন্তোষজনক না হলে সেই সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।

এ অবস্থায় আবদুর রহিমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। পিএসসিও বরখাস্তের পক্ষে মত দেয়। ফলে গত ২০ জানুয়ারি তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

এ বিষয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবুর রহমান আরও বলেন, নতুন সরকার গঠনের পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। আমরা প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ মতোই কাজ করছি।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক শুমারির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সামগ্রিক চালচিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু এ প্রকল্পে দুর্নীতি হলে প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে না। তা ছাড়া সরকারের শেষ সময়ে এসে এ ধরনের দুর্নীতি হলে তার প্রভাব সরাসরি সরকারের কাঁধেই পড়ে। সঠিক সময় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কারণে সে রকম কিছুই হয়নি। আমি যতদিন দায়িত্বে থাকব ততদিন কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না।

(দ্য রিপোর্ট /জেজে/এইচএসএম/সা/জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)