ইলিশ উৎপাদনে রেকর্ড
রফতানি করে ২ হাজার কোটি টাকা আয় সম্ভব
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং পাচার ঠেকাতে জাতীয় মাছ ইলিশ রফতানির কথা ভাবছে সরকার। বর্তমানে যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন ও আহরণ করা হচ্ছে তা বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড। তাই অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ হাজার টন ইলিশ রফতানি করা সম্ভব। এতে বছরে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেতে পারে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদন ও বাজার সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রেখে ইলিশ রফতানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গত ৪ বছর ধরে দেশে প্রতিবছর ৩ লাখ ৫১ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন ও আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছরই ১০ থেকে ১৫ হাজার টন ইলিশ উদ্বৃত্ত থাকছে। যা রফতানি করে বছরে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
জানা গেছে, বর্তমানে ইলিশ উন্নয়ন কার্যক্রম ৪ জেলার ২১ উপজেলা থেকে বাড়িয়ে ১২ জেলার ৫১ উপজেলায় বিস্তৃত করা হয়েছে।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইলিশ রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ের আগ পর্যন্ত ৫ বছরে ২২ হাজার ২২ দশমিক ৭৯ টন ইলিশ রফতানি করে ৯৪৪ দশমিক ০৪ কোটি টাকা আয় করে সরকার।
এর মধ্যে ২০১২-১৩ সালে ৫২৩ দশমিক ২০ টনে ২৪ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা রফতানি আয় হয়েছে। এ ছাড়া ২০১১-১২ সালে ৬ হাজার ১৭৩ দশমিক ৬৫ টনে ২৯৪ কোটি টাকা, ২০১০-১১ বছরে ৮ হাজার ৫৩৮ দশমিক ৭৭ টনে ৩৫২ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা, ২০০৯-১০ সালে ৩ হাজার ১০৭ দশমিক ১৭ টনে ১২৪ দশমিক ১২ কোটি টাকা ও ২০০৮-০৯ বছরে ৩ হাজার ৬৮০ টনে ১৪৯ দশমিক ৬ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক এবিএম জাহিদ হাবিব বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন ও আহরণ করা হচ্ছে তা বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড। বর্তমানের মতো অতীতে কখনোই এতো ইলিশ উৎপাদন সম্ভব হয়নি। বর্তমানে উৎপাদিত ইলিশ বিদেশে রফতানি করে অনায়াসে বিদেশি মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস সাধারণত ইলিশের মৌসুম নয়। অথচ ঢাকার অলি-গলিসহ সারাদেশে ব্যাপক হারে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সেই আগস্ট মাস থেকে দেশের মানুষ তুলনামূলক সস্তায় ইলিশ মাছ কিনে আসছে। ইলিশ ব্যবস্থাপনার বিশেষত্বের কারণে ইলিশের এ বিপুল উৎপাদন হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি যদি সর্বস্তরের জনগণ এ ব্যাপারে আন্তরিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে তা হলে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে।’
আক্ষেপের সুরে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যেখানে অশিক্ষিত সহায়হীন জেলেরা বছরে ৪ থেকে ৫ মাস অনাহারে থাকার ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখেন, সেখানে সচেতন কোনো মানুষের কী জাটকা কিনে খাওয়া উচিত?’
তিনি বলেন, ‘রফতানি বন্ধ থাকায় মাছ পাচারের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। শুধু ভারত নয়, মায়ানমার ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মাছ রফতানি করা যেতে পারে।’
দুই মাস আগে মায়ানমার ও ভারতে মাছ পাচারের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌবাহিনী, পুলিশের আইজি, কোস্টগার্ডকে মৎস্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে।
জানা গেছে, সরকার মাছ রফতানির ব্যাপারে নীতিগতভাবে উৎসাহী থাকলেও নির্বাচনের আগে কৌশলগত কারণে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে ইলিশ রফতানির ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।
(দ্য রিপোর্ট/এম/এনডিএস/সা/এনআই/এইচএসএম/জানুয়ারি ২৩, ২০১৪)