আমানউল্লাহ আমান, দ্য রিপোর্ট : মহাজোট সরকারের নব গঠিত মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর এবার দল থেকেও বাদ পড়তে পারেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।

এর আগের মহাজোট সরকারের টেকনোক্রেট কোটায় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন দিলীপ বড়ুয়া। সে সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারী, দলীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও মন্ত্রী হওয়ার লোভে রহস্যজনক আচরণ ও অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়ায় দলীয় ইমেজ সঙ্কটে ফেলার অভিযোগ ওঠে তার ‍বিরুদ্ধে।

কয়েকজন নেতা জানান, শনিবার অনুষ্ঠিতব্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বেঠকে দিলীপ বড়ুয়াকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার ও দলের নেতৃত্বে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসলেও অবাক করার মতো কিছু ঘটবে না।

শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন তার বিরেুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সাম্যবাদী দলের ইমেজ নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করে দলের বেশ কয়েকজন নেতা। তারা বলেন, এ কারণে তারা দিলীপ বড়ুয়ার ওপর ক্ষুব্ধ। দলের অন্তত ৫ নেতা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি ১৪ দলের কাণ্ডারী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাবই উত্থাপন করেননি।

দলীয় নেতারা জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় রাজশাহী-৬ থেকে দলের পলিটব্যুরোর সদস্য লুৎফর রহমান, নাটোর-১ থেকে কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট বীরেন সাহা, রংপুর-১ থেকে ফিরোজ আহমেদ, নীলফামারী সদর আসন থেকে ড. মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ, খুলনা-৩ থেকে এসএম ইকবাল হোসেন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাম্যবাদী দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দলের সাধারণ সম্পদক বিষয়টি ১৪ দলের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে উত্থাপন করেননি, কারণ তিনি আবারও টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।

দলের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দলের নেতাদের সঙ্গে একমত হতে চান নি। কারণ তিনি মনে করেছেন, বিষয়টি ১৪ দলে উত্থাপন করলে তার মন্ত্রীত্ব পেতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

দলের এই কেন্দ্রীয় নেতা আরো বলেন, দিলীপ বড়ুয়া নিজেই দল থেকে নির্বাচন করতে চাননি। কারণ তিনি জানতেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কখনোই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের আসনে থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পরিবর্তে তাকে মনোনয়ন দেবেন না।

সূত্র আরো জানায়, গত পাঁচ বছরে দিলীপ বড়ুয়া আর্থিকভাবে ফুলে ফেপে উঠলেও দলের নেতা কর্মীদের প্রতি তার কখনোই সুনজর ছিলোনা। ৪২ জেলায় দলের কমিটি রয়েছে। বেশ কিছু জেলায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো নেতা ছিলেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি দিলীপ বড়ুয়ার রহস্যময় ভূমিকার কারণে।

দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিষয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে সাম্যবাদী দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হতে পারে বলে জানায় সূত্রটি।

এ ব্যাপারে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করে দ্য রিপোর্টকে বলেন, যদি কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঝে অভিযোগ থাকে তবে তারা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তাদের অভিযোগ উত্থাপন করতে পারেন।

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এসবি/জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)