শামসিয়া : আফগানিস্তানের লড়াকু নারী
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদন : আফগান নারী শামসিয়া হুসেইনিকে ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে স্কুলের বাইরের রাস্তায় কয়েকজন হামলাকারী মুখে এসিড ছুড়ে মারে। ঘটনায় তার মুখ ও চোখের পাতা মারাত্মক পুড়ে যায়। এসিড হামলায় হতদ্যম হয়ে পড়েননি শামসিয়া। হাসপাতাল থেকে সুস্থ্ হয়েই আবার স্কুলে ফিরে যান। শেষ করেন তার শিক্ষা। শিক্ষা শেষে শিক্ষক হয়ে এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানে শিক্ষা প্রসারে ব্রতী হয়েছেন শামসিয়া। হয়ে উঠেছেন আফগান নারী শিক্ষার লড়াকু যোদ্ধা।
ঘটনার দিন সকালে স্কুলে যাবার পথে মুখোশধারী এক ব্যক্তি শামসিয়ার কাছে জানতে চায়, সে স্কুলে যাচ্ছে কিনা। আর এরপরই ঐ ব্যক্তি শামসিয়ার মুখের নেকাব ছিড়ে ফেলে। একটি স্প্রে-গান থেকে তার মুখে এসিড ছুড়ে মারে।
সুস্থ হ্ওয়ার পর শামসিয়া কান্দাহারের শহরতলীর অল-গার্লস মিরওয়েস মেনা স্কুলে আবারও যাওয়া শুরু করে। তার সঙ্গে সেই দিন সকালে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী একই ধরনের হামলার শিকার হয়। কিন্তু শামসিয়া এবং তার কয়েকজন বন্ধু পড়াশুনা বন্ধ করতে অসম্মতি জানায়। তাদের বাবা-মাও সন্তানদের শিক্ষা চালিয়ে নেয়ার ব্যাপারে অবস্থান নেয়।
এ ঘটনার পাঁচ বছর কেটে গেছে। ২২ বছরের শামসিয়া এখনও স্কুলে আছেন। তবে এখন তিনি নয়-দশ বছরের একদল মেয়ের শিক্ষক।
কাবুল এবং দিল্লীর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পর শামসিয়ার ক্ষত সেরে গেছে। যদিও তিনি ঝাপসা দৃষ্টি এবং চোখের ব্যথায় এখনো ভোগেন।
তিনি বলেন, শিক্ষক হ্ওয়াটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। কারণ এর মধ্য দিয়ে আমি সবাইকে দেখাতে চাই যে হামলাকারীরা জয়ী হয়নি। কারণ এই হামলার পরও আমরা স্কুলে ফিরে এসেছি। আর নারীরা রান্না ঘরের বাইরেও আরও অনেক কাজ করতে পারে।
শামসিয়া তার উপর হামলার বিষয়ে আলাপচারিতার সময় দৃঢ়তা প্রকাশ করেন এবং তার উপর হামলাকারীদের এখনও কোন শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট কারজাই ঐ ব্যক্তিদের ফাঁসি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদি আমি কখনও তার সঙ্গে কথা বলতে পারি, তাকে আমি জিজ্ঞাসা করব যে, তিনি কেন এটা করতে ব্যর্থ হলেন।
১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ইসলামপন্থী তালেবানরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা দেশটিতে নারী শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে তারা এসিড হামলার সঙ্গে কোন ধরনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেন। ঘটনায় নয় জন সন্দেহভাজনকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শামসিয়া এটাও বলেছেন যে, একজন হামলাকারী তার বাড়ির কাছেই থাকে এবং সে প্রতিদিনই তাকে স্কুলে যেতে দেখে।
তিনি বলেন, এই ব্যক্তি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটাতে পারে। তার বিচার করা হয়নি, কিন্তু তাকে শাস্তি দেয়া দরকার।
(দিরিপোর্ট২৪/এএম/এমডি/ নভেম্বর ০১, ২০১৩)