স্ত্রীসহ পরিদর্শন অধিদফতরের কর্মচারীকে নোটিশ করবে দুদক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের (ঢাকা বিভাগ) সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আবুল হাসিম ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ায় সম্প্রতি এ নোটিশ জারির অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। শিগগির তাদের বরাবর এ নোটিশ জারি করা হবে। দুদক সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মো. আবুল হাসিম নিজ ও স্ত্রীর নামে ঢাকার ৫৮ উত্তর গোরানে দুই দশমিক ২৫ কাঠা জমি ক্রয় করেছেন। যার মূল্য দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫৪৫ টাকা। আবুল হাসিম ওই জমিতে চার তলা ভবন নির্মাণ করেন। তিনি বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডি ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ, ছয় লাখ ৫২ হাজার ৩২১ টাকার বাকিতে মালামাল ক্রয় এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। অর্থাৎ বাড়িটি নির্মাণে মোট ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৩২১ টাকা ব্যয় করেন তিনি। ২০০৫ সালে চার তলা ওই বাড়িতে আরও একতলা বাড়িয়ে পাঁচতলা করেন। যা তার আয়কর বিবরণী নথিতে উল্লেখ নেই।
আবুল হাসিম তার স্ত্রীর নামে রেডিয়েন্ট প্রপার্টি (প্রাইভেট) লিমিটেডের কাছ থেকে বনশ্রী ‘এফ’ ব্লকে ৪৫ লাখ টাকায় ১১৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। ফ্ল্যাটটি আইডিএলসি ব্যাংকের ২০ লাখ টাকা লোন ব্যতিরেকে নিজস্ব অর্থে ক্রয় করেছেন তিনি। ফ্ল্যাটটির কোনো বিবরণ মাহমুদা বেগমের আয়কর নথিতে নেই।
এ ছাড়া আবুল হাসিম নিজ অর্থায়নে তার স্ত্রীর নামে ইস্টার্ন হাউজিং-এর আফতাব নগরে সাড়ে তিন কাঠার একটি প্লট ক্রয় করেন। ক্রয় মূল্যের সঠিক কোনো বিবরণ দিতে পারেননি তিনি। প্লটটির ক্রয় মূল্য তার ঘোষিত মতে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু রেকর্ডপত্র অনুযায়ী প্রকৃত মূল্য ২১ কোটি ১৫ লাখ ২২৫ টাকা। এ প্লটটির কথাও মাহমুদা বেগমের আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই।
আবুল হাসিম পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় তিন কাঠার একটি প্লট ক্রয় করেন। যার মূল্য চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। আবুল হাসিমের অর্থের উৎস হিসেবে জিপিএফ-এর দুই লাখ টাকা ও তার বাড়ি ভাড়ার আয় দেখিয়েছেন। প্লটটি তিনি ২০০৫ সালে রাজউক থেকে বরাদ্দ পান। তিনি শেষ কিস্তি এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা ২০০৬ সালের ৩১ জুলাই পরিশোধ করেন। কিস্তি পরিশোধের পাঁচ বছর ১১ মাস পর ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি জিপিএফ থেকে দুই লাখ টাকা উত্তোলন করেন।
দুদক সূত্র জানায়, আবুল হাসিম ১৯৭৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ওই কর্মস্থলে যোগদান করেন। তিনি জানুয়ারি ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত সব কর্তন ব্যতিরেকে বেতন-ভাতা পান ২৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৭১/৪০ টাকা। যা তার চার সন্তানসহ ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণে ব্যয় হয়েছে। আবুল হাসিমের বড় মেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করেছেন। তার বড় ও মেঝ মেয়ে বিবাহিত। ফলে আবুল হাসিমের বেতন-ভাতার অর্থে এ সব সম্পদ অর্জন সম্ভব নয়।
সূত্র আরও জানায়, সার্বিক বিবেচনায় আবুল হাসিম ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫০ টাকা মূল্যের ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম ৭৩ লাখ ১১ হাজার ৩৯০ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
দুদকের উপ-পরিচালক রাহিলা খাতুন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধান করেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এনডিএস/সা/জানুয়ারি ২৫, ২০১৪)