এক বছর আগে সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের। তাই ৯ বছর আগের কমিটি দিয়েই চলছে মহানগরের কার্যক্রম।

জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এর ২ দিন পর ২৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে মহানগরের কমিটি ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

সূত্রটি জানায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও আজো মহানগর কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে ৯ বছর আগে গঠিত কমিটি দিয়েই চলছে মহানগরের কার্যক্রম।

এতে করে সামনে আসছে না নতুন নেতৃত্ব। আবার নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা পদ-পদবি না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। ত্যাগী নেতাকর্মীরা ভুগছেন হতাশায়। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে পড়ছে ভাটা।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বর্তমান কমিটির প্রভাবশালী নেতারা পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করার পাশাপাশি নিজ ভাগ্যোন্নয়ণে ব্যস্ত রয়েছেন। ফলে ত্যাগী নেতাকর্মীরা হয়ে পড়ছেন উপেক্ষিত। এতে করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে এ সব প্রভাবশালী নেতার দূরত্ব দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ ও নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে মহানগরের আওতাধীন যে সব কমিটি রয়েছে সেগুলোর সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য মহানগরের কমিটি ঘোষণা করতে বিলম্ব হচ্ছে। খুব শিগগির মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিটি গঠনে বিলম্ব হলেও এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ বা হতাশা নেই। যদি হতাশা বা ক্ষোভ থাকতো তাহলে তাদের তো আর রাজপথে দেখা যেতো না।

নগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলেও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এর ২ দিন পর ২৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন মহানগরের কমিটি ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

সূত্রটি জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কমিটি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আগের কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে। এ নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এরপর একাধিকবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার শুধু আশ্বাসই দেওয়া হয়। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

সূত্রটি জানায়, ২০০৩ সালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিশেষ সম্মেলনে ঢাকার প্রথম মেয়র মোহাম্মদ হানিফকে সভাপতি ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ঢাকা মহানগর কমিটি করা হয়। সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ মারা যাওয়ার পর নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমএ আজিজকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়েই সংগঠনটি চলছে দীর্ঘ ৯ বছর।

এদিকে ২০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ঢাকা মহানগরের সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সম্মেলন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর মহানগরের নতুন কমিটি করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় ওই বৈঠকে।

মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ফেব্রুয়ারি মধ্যেই সকল থানা ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হলে কার্যনির্বাহী কমিটিই ওই সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে দেবে। এরপর নগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছর পর পর সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। এর আগে নগরের আওতাধীন সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির সম্মেলন করতে হবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরের অধীনে ২৪টি থানা, ১০০টি ওয়ার্ড ও ১৮টি ইউনিয়ন কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কলাবাগান, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ ও ধানমন্ডি থানা শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে নগরীর ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ ও ২২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনের পর অন্যান্য থানা-ওয়ার্ড- ইউনিয়ন নেতারাও উৎসাহিত হন। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা এই সম্মেলনে অনেকটাই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

সূত্রটি জানায়, এরপরে আর কোনো থানা-ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে নির্বাচনের আগে নগর আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা রাখতে নির্বাচন কেন্দ্রভিত্তিক ১৬০০ কমিটি গঠন করা হয়। এই ১৬০০ কমিটি দিয়ে বিগত দিনের আন্দোলন পরিচালনা ও নেতাকর্মীদের শান্ত রাখার চেষ্টা চালানো হয়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঘন ঘন বর্ধিত সভা ও বিরোধী দলের ডাকা কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, সম্মেলনে নগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা পদপ্রত্যাশী। আবার অনেক ত্যাগী নেতাও পদপ্রত্যাশী। সে ক্ষেত্রে কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই দলীয় সভাপতি কমিটি ঘোষণা করছেন না।

সূত্রটি জানায়, বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ সভাপতি পদ প্রত্যাশী। আবার সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়াও সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার ও সংসদ সদস্য একেএম রহমতউল্লাহ এই পদে আসতে আগ্রহী।

এদিকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিমও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, নগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন শাখাসমূহের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অনেক আগেই করা হয়েছে। কিন্তু নগরের থানা ও ওয়ার্ডের কমিটিগুলো যেমন করা হয়নি, তেমনি নগরের কার্যনির্বাহী কমিটিও হয়নি।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ফেব্রুয়ারিতেই সম্মেলনের মাধ্যমে এই কমিটিগুলো হয়ে যাবে। এরপর নগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হতে পারে।

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এসবি/ এনআই/জানুয়ারি ২৫, ২০১৪)