দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : সংসদে যেসব দলের প্রতিনিধি আছে তাদের মধ্য থেকেই সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার রাতে গণভবনে জাতীয় পার্টির (জেপি) সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হবে। সংসদে যাদের প্রতিনিধি আছে তাদের নিয়েই। কারও মনে যেন সন্দেহ না থাকে। নির্বাচনটা কীভাবে হয় সেটা যেন সবাই দেখতে পারে।’

বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটা জায়গা থেকে শুরু করতে চাই আর তা হলো আগামী প্রজন্মের জন্য। তাদের যেন কষ্ট না হয়। একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে যেন ক্ষমতার পরিবর্তন হয়।’

জেপির সভাপতি আনোয়ার হোসন মঞ্জু এবং মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাংবিধানিক ধারার পক্ষে তার দলের অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সাংবিধানিক ধারার পক্ষে ছিল, এখনো আছে। আমরা চাই সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত থাকুক। সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচন হলে, আমরা নির্বাচনের পক্ষে।’

তিনি বলেন, একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করা উচিত।

সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নিজের যৌক্তিকতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আগামীতে সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন করতে চাই। বাংলাদেশের আমরা এটা শুরু করতে চাই।’

তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ক্ষমতা দেওয়ার পর থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আড়াইশর বেশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।

নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে বিএনপি বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধি করে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করে বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুসরণ না করে বিএনপি রাষ্ট্রপতিকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে। এরপর উপদেষ্টাদের পালাবদলের এক পর্যায়ে ওয়ান-ইলেভেন আসে।’

আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাকেও দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়। আর আমাকে দেশে ফিরতে দেয়নি। আর যেন কোনো অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতা দখল করতে না পারে- তাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাই।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “টেলিভিশনের সামনে গিয়ে কেউ যেন আর বলতে না পারে, ‘আমি রাষ্ট্রপতি হলাম’। এই ‘আমি রাষ্ট্রপতি হলাম’ এটা যেন আর না হয়।”

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করা হয়েছে বলেও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে সংবিধানিকভাবে ক্ষমতার বদল হতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক নির্বাচনে আমরা হেরেছি। আমরা মাথা পেতে নিয়েছি। জনগণ যাকে চায়- তাকেই নির্বাচিত করতে পেরেছে।’

বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে ফোনালাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাকে দাওয়াত দিলাম। আর, জবাবটা কি পেলাম। আপনাদের জানা আছে।’

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ না নিলে হরতাল দেওয়ার বিরোধী দলের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ যাতে কষ্ট না পায়- সেজন্য উপযাজক হয়ে তাকে ফোন করলাম। উনি মানলেন না। আমি ওনাকে সকালেই ফোন করতাম। আমি জানতাম, উনি একটু দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন।’

শেখ হাসিনা একই প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাধারণ কেউ ফোন করলে, যাকে ফোন করে সে-ই রিটার্ন করে। তারপর, আমি আমার এডিসিকে যোগাযোগ করতে বললাম। উনি নাকি রাত ৯টার আগে কথাই বলতে পারবেন না। যে ঝারি-টারি খেলাম, সেটা বলতে চাই না। কে তর্ক করতে যাবে। আমার তর্ক করার প্রবৃত্তি নেই। উনি শুনলেনই না। হরতাল করবেনই। হরতালে বোমা হামলা করলেন। হরতাল করে উনি ২০ জন মানুষের জীবন নিতে পেরেছেন। আর কিছু অর্জন করতে পারেননি।’

(দিরিপোর্ট২৪/ওএস/এএস/জেএম/নভেম্বর ০২, ২০১৩)