‘দিন গুণতে থাকেন, সময় বেশি নেই’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৯-দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘দিন গুণতে থাকেন, সময় বেশি নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের লোকেরা বলেন, তারা ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। ৫ বছর নয়, কয়দিন ক্ষমতায় থাকেন; দেখেন। সময় বেশি নেই।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে শনিবার রাতে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) ১৮ দলীয় জোটে যোগদান অনুষ্ঠানে বক্তব্যে খালেদা জিয়া এ সব কথা বলেন। এ সময় তিনি ঘোষণা করেন, ‘এখন আর ১৮ দলীয় জোট নয়, আমরা এখন ১৯ দলীয় জোট। আজকের দিনটি দেশের গণতন্ত্র হত্যা দিবস। এই দিনে গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। আমরা এই দিনে ১৮ দলীয় জোটকে বড় করে ১৯ দলের জোট করলাম। ১৯ খুব লাকি নাম্বার। ২০১৪ সালেই দেশের জনগণের জন্য শুভ কল্যাণকর পরির্বতন আসবে ইনশা-আল্লাহ।’
খালেদ জিয়া বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ও কাজী জাফর আহমেদ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি লোকই দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। জনগণের টাকা লুট করে নিজেরা ধনী হয়েছে। আর জনগণ হয়েছে গরিব। এটাই হলো আওয়ামী লীগের চরিত্র।’
তিনি জোট নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক লোভ-লালসা দেখাবে। কিন্তু সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনও ভয়ভীতির কাছে মাথা নত করবেন না। সঠিক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাবো। জয় আমাদের হবেই।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণকে ভয় পায়। সে জন্য জোর-জবরদস্তি করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। জনগণ ভোট না দিলেও প্রহসন ও তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, ‘জনগণ ভোটকেন্দ্রে যায়নি, তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের গ্রহণ করেছে। আমরা জনগণের প্রতি ভোট বর্জনের আহ্বান করেছিলাম। আর তারা ভোট দেওয়ার আহবান করেছিল। কিন্ত জনগণ আমাদের আহ্বান গ্রহণ করেছে। তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং জনগণ যেহেতু তাদের ভোট দেয়নি তাই দেশে-বিদেশে তাদের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। এরা হলো অবৈধ সরকার।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোট দেয়নি, এ জন্য তাদের খুব রাগ হয়েছে। তারা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা বলে সংখ্যালঘু, আমরা বলি না। আমরা বলি, সবাই বাংলাদেশী। দেশি-বিদেশিদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই তারা হিন্দুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আমরা তদন্ত টিম করে দিয়েছি। হিন্দুদের ওপর হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে। সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে। অপরাধীরা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী। বিষয়টি ইতোমধ্যে কিছু খবরের কাগজে এসেছে।’
প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে হবে বলেও জানান তিনি।
১৯ দলীয় জোট নেতা সরকারের প্রতি অভিযোগ এনে আরও বলেন, ‘জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। অথচ ওরা আমাদের কোনও পিসফুল কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। আমাদের সমাবেশের ওপর তারা গুলি চালিয়েছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে এখন মানুষ হত্যা করেছে, লাশও পাওয়া যাচ্ছে না। তারা আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সহিংসতা চালিয়েছে, ব্যাংক জ্বালিয়ে দিয়েছে। হাসিনার নির্দেশে গান পাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। অথচ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাস্তায় নামলেই গুলি চালানো হচ্ছে।’
‘বাংলাদেশকে নিয়ে এখন নানামুখি ষড়যন্ত্র চলছে’
১৯ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে এখন নানামুখি ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। দেশকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।’
তিনি এ সময় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র আজ মৃত। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। আন্দোলনে সারাদেশের মানুষ সাড়া দিয়েছে। ঢাকায় হয়তো আন্দোলন কিছুটা কম হয়েছে। কিন্ত সারাদেশে জনগণ যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তা মুক্তিযুদ্ধের সময়ও হয়নি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আন্দোলনে আমরা হারিনি। জিতেছি আমরা, হেরেছে আওয়ামা লীগ।’
এরশাদ ভাওতাবাজ : কাজী জাফর
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদ এরশাদকে ‘ভাওতাবাজ’ উল্লেখ করে বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে এরশাদের ভাওতাবাজী এবং তার রাহুমুক্ত করার জন্য আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। এ লড়াইয়ে আমাদের জীবনও ছিল হুমকির মুখে।’
আমি জোটনেত্রীকে (খালেদা জিয়া) বলবো, ‘আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। প্রকৃত অর্থে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে। এ বিজয় আমাদের চিহ্নিত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা ১৮ দলের সঙ্গে যোগদান করবো। দেশে গণতন্ত্র আজ নিহত, একে উদ্ধার করতে হবে। সেই আন্দোলনে আমরা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও প্রয়োজনে আপনার (খালেদা জিয়া) নেতৃত্বে জীবন বাজী রেখে হলেও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বো।’
গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে এ যোগদান অনুষ্ঠান শুরু হয়ে ৯টা ৪০ মিনিটে শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য টি আই এম ফজলে রাব্বি, মাহমুদুল হাসান, এস এম এম আলম, ড. সৈয়দ শফিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা বাটুল, এইচ এম গোলাম রেজা, এম কে আলম চৌধুরী, নবাব আলী, মনিরা বেগম, হাসান হারুনুর রশিদ, রফিকুল হক হাফিজ, ভাইস চেয়ারম্যান সুবাদ আহমেদ, জসিম জাফর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শওকত হোসেন সিদ্দিকী, সৈয়দ আহমেদসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সারোয়ারী রহমান, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলীমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় ও যোগদান অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ১৮দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মে. জে. (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. রেদওয়ান উল্লাহ শহীদি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামীক পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মোবিন, খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি এইচ এম কামরুজ্জামন খান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গনী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শেখ শওকত হোসেন নীলু, বাংলাদেশ পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর শেখ আনোয়ারুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের শায়েখ আব্দুল মোবিন, ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন মনি।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এমএআর/জানুয়ারি ২৫, ২০১৪)