শ্রী অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : হিন্দুধর্মের সৎসঙ্গ নামে সম্প্রদায়ের প্রবর্তক শ্রী অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর ১৯৬৯ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের ঝাড়খন্ডের দেওঘরে মৃত্যুবরণ করেন। স্বাবলম্বন ও পরনির্ভরশীলতা ত্যাগের দীক্ষা তার মূলমন্ত্র। ভক্তদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ও মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি স্থাপন করেন।
শিবচন্দ্র চক্রবর্তী ও মনোমোহিনী দেবী দম্পতির বড় ছেলে অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার হেমায়েতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। অনুকূল মায়ের দেওয়া নাম। অল্প বয়সেই মানবসেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে নেন। বন্ধুর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি না থাকায় নিজের ফি’টা তাকে দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। পরে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়তে কলকাতা যান। পড়া শেষে হেমায়েতপুর ফিরে চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ করেন। এতে ব্যাপক সাফল্য পান।
এক সময় অনুভব করেন, মানুষের প্রকৃত সমস্যা মনে। শরীরের অসুখের মূলেও মানসিক দুর্বলতা। মানসিক সংকট মোচনে গড়ে তোলেন কীর্তন দল। এরপর মানবসেবায় হেমায়েতপুরে একে একে গড়ে তোলেন সৎসঙ্গ তপোবন বিদ্যালয়, বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্র, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কশপ, কেমিক্যাল ওয়ার্কস, কুটির শিল্প, ব্যাংক, পূতকার্য বিভাগ, মাতৃসংঘ, স্বাস্থ্য বিভাগ, কলাকেন্দ্র, আনন্দবাজার ও গৃহনির্মাণ বিভাগসহ নানা কর্মমুখী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সময়ে অনুকূলচন্দ্র ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেন মহাত্মা গান্ধী, এ কে ফজলুল হক, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসসহ দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
পাকিস্তান সরকার হেমায়েতপুরে অনুকূলচন্দ্রের প্রায় ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ১৯৫৬ সালে মানসিক হাসপাতাল নির্মাণ করেন। ১৯৬৮ সালে হেমায়েতপুরে তার স্মৃতিবিজড়িত স্থানে সৎসঙ্গের সাধারণ ভক্তরা নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রম’।
মানবজীবনের সমস্যার সমাধানে তিনি অনেক বাণী দিয়েছেন। সে সব বাণী নিয়ে বইও প্রকাশিত হয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য বাণীর মধ্যে রয়েছে- ‘বাঁচা বাড়ার মর্ম যা, ধর্ম বলে জানিস তা’, ‘ধর্মে মানুষ বাঁচে বাড়ে, সম্প্রদায়টা ধর্ম নারে’, ‘মরো না, মেরো না, পার তো মৃত্যুকে অবলুপ্ত করো’, ‘পিতায় শ্রদ্ধা মায়ে টান, সেই ছেলে হয় সাম্যপ্রাণ’, ‘লেখাপড়ায় বড় হলেই শিক্ষা তারে কয় না, অভ্যাস, ব্যাভার, সহজ জ্ঞান, না হলে শিক্ষা হয় না’, ‘জানলে অনেক করলে না, ঠকলে কত বুঝলে না’ ও ‘সাধু হও, সাধু সেজো না’।
অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর প্রায় ৪৬টি বই রচনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বই হল- সত্যানুসরণ, পুণ্যপুঁথি, অনুশ্রুতি (৬ খণ্ড), চলার সাথী, শাশ্বতী (৩ খণ্ড), যতি অভিধর্ম, নানা প্রসঙ্গ, কথা প্রসঙ্গ, বিবাহ বিধায়না, শিক্ষা বিধায়না, নিষ্ঠা বিধায়না, বিজ্ঞান বিধায়না, বিজ্ঞান বিভূতি ও সমাজ সন্দিপনা।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/জানুয়ারি ২৫, ২০১৪)