নদী খননের কাজ পাচ্ছে না ‘বসুন্ধরা’
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুরুল করিম দিরিপোর্ট২৪-কে জানান, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগসহ প্রাক্কলন ও পরিকল্পনা প্রণয়ন না করেই এসব নৌপথের খনন কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বসুন্ধরা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেডের নাম প্রস্তাবের সুপারিশ করে বিআইডব্লিউটিএ’র সাত সদস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। নৌমন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট মতামত না থাকায় এবং ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট অব প্রজেক্ট প্রোপোজাল) এর শর্ত না মানায় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এটির অনুমোদন দেয়নি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সভাপতিত্বে রবিবার সচিবালয়ে ক্রয় কমিটির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
নুরুল করিম আরো জানান, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মতামতসহ পরবর্তীতে প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপনের জন্য বলা হয়েছে।
নৌ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অনুমোদিত প্রকল্পের ডিপিপিতে খনন কাজের পরিকল্পনা ও তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খনন কাজের পরিমাণ প্রাক্কলন ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এর ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু এক্ষত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি। এছাড়া, ডিপিপিতে মূলত ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কথা বলা হলেও দরপত্রে মেইনটেনেন্স ড্রেজিংয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে।
সূত্র জানায়, দরপত্রটি প্রতিযোগিতামূলক হয়নি। অনেকটা একতরফাভাবে এটি বসুন্ধরা পেতে যাচ্ছিল। ডিপিপিতে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের সুযোগ থাকলেও শুধুমাত্র দেশিয় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
প্রকল্পের সারসংক্ষেপ
অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম পর্যায়-২৪টি নৌপথ) প্রকল্পটি পাঁচটি অংশে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হবে। এটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৭৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। একটি অংশের (লট নং-৪) মাধ্যমে বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পাথরঘাটা নৌপথে ৪৫ লাখ ঘনমিটার খনন করা হবে। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৬৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮০ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত ২৪টি নৌপথে মোট ১০১৪ লাখ ঘনমিটার খনন করা হবে। এর মধ্যে ৮১৪ লাখ ঘনমিটার প্রাইভেট ড্রেজার দিয়ে ও বাকি ২০০ লাখ ঘনমিটার বিআইডব্লিউটি-এর ড্রেজার দিয়ে খনন করা হবে। প্রাইভেট ড্রেজারের ৮১৪ লাখ ঘনমিটারের মধ্যে সাধারণ ক্যাটাগরির নৌপথে ৬৭৭ দশমিক ২২ লাখ ঘনমিটার এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাটাগরির নৌপথে ১৩৬ দশমিক ৮০ লাখ ঘনমিটার খনন করা হবে।
নৌ মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে আরো জানা যায়, প্রকল্পটির আওতায় ড্রেজিংয়ের জন্য নির্ধারিত ২৪টি রুটের সুনির্দিষ্ট কোন অগ্রাধিকার এখনো করা হয়নি। খননের বিপুল চাহিদার বিপরীতে যে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে তা দিয়ে সবচেয়ে ভালো ফল পেতে আগে রুটগুলোর অগ্রাধিকার নির্ধারণ প্রয়োজন ছিল।
বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পাথরঘাটা নৌপথটি ডিপিপিতে ঝুঁকিপূর্ণ (ভালনার্যাবল) ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত। এ অংশের খনন কাজের জন্য চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দরপত্র আহ্বান করলে দুটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান এএমডিএল (অ্যাকেয়া মেরিন ড্রেজিং লিমিটেড)-এডিএল (এশিয়া ড্রেজিং লিমিটেড), অপরটি বসুন্ধরা ড্রেজিং কোম্পানি লিমিটেড।
বিআইডব্লিউটিএ’র সাত সদস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এএমডিএল-এডিএলকে ননরেসপন্সিভ (অযোগ্য) ঘোষণা করে। একমাত্র যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বসুন্ধরার নাম সুপারিশ করে তারা।
(দিরিপোর্ট২৪ডটকম/জি/এমএআর/জেএম/অক্টোবর ০৭, ২০১৩)