দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের দিন (২০১৫) এগিয়ে আসছে দ্রুত। একে সামনে রেখে জাতিসংঘের সদস্য দেশ ও জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারক ও সুশীল সমাজের মধ্যে ২০১৫ সাল পরবর্তী নারী উন্নয়ন ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে অসংখ্য কর্মপ্রক্রিয়া জারি রয়েছে।

অসংখ্য রাষ্ট্র এ সম্পর্কিত বিগত কর্মসূচিগুলো থেকে যে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা পেয়েছে তা পর্যালোচনা করে দেখছে। এ পর্যালোচনা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলো তারা ২০১৫ পরবর্তী নারী উন্নয়ন ফ্রেমওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোর বিবেচনা করছেন।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রকল্পের ওপর সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষণীয় মাত্রার অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতা অর্জনে প্রতিটি দেশের সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে এ বিষয়ে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে।

নারীর ক্ষমতায়ন মানে হল, ক্ষমতাহীন দশা থেকে ক্ষমতার অবস্থানে উত্তরণ। শিক্ষা নারীর ক্ষমতায়নের সবচেয়ে জরুরি উপায়। এর পাশাপাশি উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য নারীকে জ্ঞান, কর্মদক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসও অর্জন করতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়েই যখন তাদের সম্ভাবনা বিকাশের সমান সুযোগ পাবে তখনই কেবল স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব।

বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা অসংখ্য ও বিস্তর শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার কারণেই এ বৈষম্যের উদ্ভব।

নারীরা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও দরিদ্র মানুষের ৭০ শতাংশই নারী। বিশ্বের সর্বমোট কর্মঘণ্টার ৭০ শতাংশই নারীদের দখলে। অথচ তারা বিশ্বের সর্বমোট আয়ের মাত্র ১০ শতাংশ পেয়ে থাকে। আর পুরুষরা যা আয় করে তার মাত্র অর্ধেক পরিমাণ অর্থ আয় করে তারা।

নারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে প্রতিবন্ধকতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতাই মূলত স্থিতিশীল উন্নয়ন, মানবাধিকার, লিঙ্গ সমতা, ন্যায়বিচার এবং শান্তি অর্জনের পথে প্রধান বাধা।

বিশ্বের বেশিরভাগ এলাকাজুড়েই এখনও নারীরা ভূমির মালিকানা বা সম্পত্তির অধিকার, ঋণ গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন, আয়-রোজগার করা এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে পেশাগত উন্নয়ন প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নারীরা এই বৈষম্যের শিকার হন মূলত রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন এবং সামাজিক রীতি-নীতি ও প্রথার মাধ্যমে।

সমাজের প্রতিটি পর্যায়েই নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারীরা লক্ষণীয়ভাবে পিছিয়ে রয়েছেন।

ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই শিক্ষিত করার অর্থনৈতিক লাভালাভ সমান। এ ছাড়া সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে নারীকে শিক্ষিত করে তোলার সামাজিক লাভ আরও অনেক বেশি।

নারীরা একই সঙ্গে তাদের নিজেদের, সমাজের এবং দেশের অর্থনৈতিক স্ট্যাটাস উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অথচ এখনও তাদের অর্থনৈতিক অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া হয় না, তাদের কাজকে খাটো করে দেখা হয় এবং তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো বিকশিত করে তোলার পূর্ণ সুযোগ দেয়া হয় না।

নারী-পুরুষের বিকাশে অসম সুযোগ-সুবিধা নারীর নিজের দারিদ্র্য ‍দূরীকরণ এবং জীবনমান উন্নয়নে উন্নত সুবিধাগুলো অর্জনের ক্ষেত্রে স্বীয় সক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। শিক্ষাই সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনে সবচেয়ে কার্যকর এবং শক্তিশালী হাতিয়ার। সমাজের সামগ্রিক দারিদ্র্য দূরীকরণেও নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর একটি।

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্যই শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নারীদের ক্ষমতায়নে শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। এটা এ জন্য নয় যে, শিক্ষার মধ্য দিয়েই বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ-সুবিধাগুলোতে প্রবেশ করা যায়। বরং পরিবার ও পরবর্তী প্রজন্মের উপরও ধারাবাহিকভাবে নারীর শিক্ষাগত অর্জনের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

শিক্ষা শুধু ‍লিখতে পড়তে শেখার চেয়েও অনেক বড় কিছু। এটা যে কোনো দেশের ভবিষ্যতের জন্যই একটি বড় বিনিয়োগ। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জনের জন্যও শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। (সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, জেরুজালেম পোস্ট)

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এমডি/সা/জানুয়ারি ২৬, ২০১৪)