দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির একেএম ইউসুফ রাজাকারের মেজর ছিলেন বলে দাবি করেছেন প্রসিকিউশনের ২৬তম সাক্ষী উল্লাসীনী দাস (৭০)।

চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রবিবার সাক্ষ্য প্রদানের সময় এ কথা জানান উল্লাসীনী দাস।

এ সময় তাকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর হায়দার আলী। পরে তার জেরা শেষ করে মামলার কার্যক্রম সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

উল্লাসীনী দাস বলেন, ‘একাত্তর সালের শ্রাবণ মাসে তাদের গ্রাম শাঁখারীকাঠিতে রাজাকাররা প্রবেশ করে ঘোষণা দেয় তোমাদের সবাইকে মুসলমান হতে হবে, মুসলমান নাম রাখতে হবে। নামাজ পড়তে হবে, ওই সময় প্রায় ৩-৪ শ’ লোক জড়ো হই।’

তিনি বলেন, ‘ওই গ্রামের সব হিন্দুকে সনাতন ডাক্তারের বাড়িতে নিয়ে মুসলমান বানানো হয়, সবাইকে মুসলমান নাম দেওয়া হয়। তবে আমার মুসলমান নাম মনে নেই। পরে ডাক্তার সনাতন বাবুর দুটি গরু জবাই করে ডেকে ডেকে খাওয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকে খেতে না চাইলে গরুর খড়ে আগুন জ্বালিয়ে সবার মাঝে আতঙ্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে সবাই ছোটাছুটি শুরু করে।’

সাক্ষী আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর শোনা যায়, আমাদের এলাকায় রাজাকার মেজর ইউসুফ এসেছে। সে এলাকার সবাইকে নিরাপত্তা দেবে।’

‘গ্রামে ইউসুফের প্রবেশ করার কিছু দিন পর একাত্তরের ১৩ কার্তিক শাঁখারীকাঠি গ্রামে রাজাকাররা হঠাৎ এলোপাথারি গুলি করতে থাকে। এ সময় আমার স্বামী শহীদ মাহাদেব চন্দ্র দাস ওই বাজারেই অবস্থান করছিলেন। আমি স্বামীকে খুঁজতে বাজারে চলে আসি এবং চিৎকার করে অনিতার বাবা বলে তাকে ডাকতে থাকি। এরপর বাজারের পাশের নদীর ওপারের বাগান থেকে তিনি আমার চিৎকারে হাত তুলে সাড়া দেন’ বলেন সাক্ষী।

তিনি বলেন, ‘বাজারে পড়ে থাকা শত শত লাশ পার হয়ে আমি নদীর ওপার চলে আসি। তখন আমার স্বামীর সারা শরীর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। সন্ধ্যায় বাসায় নেওয়ার সময় তিনি মারা যান। রাতে তার সৎকার করতে পারব না বলে গ্রামের নারীরা মিলে নৌকায় করে নিয়ে তার লাশ বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেই।’

সাক্ষী আরও বলেন, ‘ওই ঘটনার পর লোকজন বলাবলি করেছে ইউসুফ মওলানা এসে দেশটাকে ধ্বংস করে দিল। এই আমার জবানবন্দি। এর আগে আমি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দিয়েছি।’

জবানবন্দি শেষে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

জেরার এক পর্যায়ে সাক্ষী উল্লাসীনী দাস বলেন, ‘রাজাকারের মেজর ইউসুফকে ’৭১ সালের ঘটনার আগে কোনো দিন দেখিনি এবং তার নামও শুনিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের বছর নির্বাচন হয়েছিল, ওই সময় আমিও ভোট দিয়েছিলাম। তখন যারা প্রার্থী ছিলেন তাদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম শুনেছি।’

জেরায় তিনি আরও বলেন, ‘সনাতন ডাক্তারের বাড়িতে কখন গিয়েছিলাম মনে নেই। তবে মনে হয় আনিুমানিক ৪টার দিকে ফেরত এসেছিলাম।’

এ ছাড়াও জেরার ১৮ কার্তিক যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদরে সবাই হিন্দু ছিল বলে সাক্ষ্য দেন উল্লাসীনী দাস।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ৪ ধরনের ১৩টি অভিযোগ দায়ের করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এআইএম/এনডিএস/সা/জানুয়ারি ২৬, ২০১৪)